ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে কঠোর লকডাউন শুরু

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৫ জুন ২০২১

বাগেরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে কঠোর লকডাউন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। জেলা ও উপজেলা সদরে অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার পরিবহন, গণপরিবহন ও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। লকডাউন কার্যকরে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য শহরে প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা তথ্য অফিস ও রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। জেলার সকল প্রবেশ পথে ও মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত লকডাউন কার্যকরের চেষ্টা করা হচ্ছে। কচুয়া বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২হাজার ৩শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন কচুয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার জীনাত মহল। এসময় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হয়। জেলার সকল উপজেলায় অনুরূপ কার্যক্রম চলছে। সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ দিনের লকডাউন শুরু ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে গত সাতদিন কঠোর বিধিনিষেধে শনাক্তের হার না কমায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলায় সাত তিনব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু“ হয়েছে। তবে প্রথম দিনে শহরে লকডাউন ছিল ঢিলেঢালা। দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হলেও অধিকাংশ দোকানের ঝাপ অর্ধেক ফেলে রেখে ক্রেতাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মালামাল বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া লকডাউন দেখার জন্য পথেঘাটে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাস্তাঘাটে অসংখ্য রিক্সা, অটো, ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও লকডাউনের শৃঙ্খলা আরোপ করার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এমনটা দেখা গেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, লকডাউন কার্যকর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে। ফটিকছড়িতে ঢিলেঢালা লকডাউন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ফটিকছড়িতে এক সপ্তাহের লকডাউন দিলেও তা চলছে ঢিলেঢালাভাবে। বুধবার থেকে জেলা প্রশাসন ঘোষিত এ লকডাউনে বিভিন্ন হাটবাজারে ৬০ শতাংশ দোকানপাট খোলা রয়েছে। মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচল করেছে। নওগাঁয় বিধিনিষেধ বাড়ল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনা প্রতিরোধে নওগাঁ জেলায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ল। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বুধবার রাতের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, নওগাঁ জেলার সব পশুরহাট বন্ধ থাকবে। তবে খামার থেকে এবং অনলাইনে পশু কেনাবেচা করা যাবে। নওগাঁর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সাথে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। রোগী পরিবহনকারী এ্যাম্বুুলেন্স, জরুরী পণ্য পরিবহন এবং জরুরী সেবা-পরিষেবা ও জরুরী সরকারী গাড়ির ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মসজিদের মাইক থেকে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক ঘোষণার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-মাদ্রাসা শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন-অর রশীদ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নেত্রকোনায় বিধিনিষেধ আরোপ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিশেষ করে এক সপ্তাহ ধরে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণের হার। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় ভারতীয় ধরনের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান জানান, সংক্রমণ এড়াতে ইতোমধ্যে দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দোকানপাট। নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগম। সীমান্তে দু-দেশের মানুষের চলাচল বন্ধ রাখতে বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বরিশালে লকডাউনের সুপারিশ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শীঘ্রই বরিশাল জেলা ও মহানগরকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনার জন্য জেলা প্রশাসককে সুপারিশ করেছেন সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে জানান, এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে যতদ্রæত সম্ভব বরিশালকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনতে পরামর্শ দেয়া হয়। লালপুরে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অর্থদণ্ড ॥ সংবাদদাতা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে নাটোরের লালপুরের গোপালপুর পৌরসভা এলাকায় বিশেষ লকডাউনের ২য় দিনে বিধিনিষেধ আরোপ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় পাঁচজনকে দুই হাজার এক শ’ টাকা অর্থদণ্ড করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মী আক্তার গোপালপুর পৌরসভা এলাকায় বাজারসহ বিভিন্ন মোড়ে অভিযান চালিয়ে অর্থদণ্ড করেন। বগুড়ায় লকডাউন নয়, কঠোর বিধিনিষেধ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, কোভিড মোকাবেলায় বগুড়া জেলা প্রশাসন লকডাউন দেয়নি। কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে। সূত্র বলেছে, লকডাউন ঢিলেঢালা হয়ে যায়। কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্কেটগুলো বন্ধ। শহরের সকল প্রবেশ পথ রুদ্ধ। বাইরের যানবাহন ভেতরে প্রবেশ করবে না। ভেতরের যানবাহন বাইরে যাবে না। জরুরী সেবা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না। গেল ক’দিনের চিত্র-কঠোর বিধিনিষেধ আর লকডাউনে কার্যত কোন পার্থক্য দেখা গেল না। যাহাই বায়ান্নো তাহাই তিপ্পান্ন হয়ে গেল। বড় মার্কেট শপিংমল বন্ধ। অন্য মার্কেটগুলো অর্ধেক সাঁটার খোলা রেখে বেচাকেনা। কার, রিক্সা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলছে। কাজ থাকুক আর না থাকুক লোকজন চলাফেরা করছে। পাড়া মহল্লায় দোকানের সামনে বেঞ্চ পেতে বসে আড্ডা জমিয়েছে। মনিহারি দোকানগুলো অর্ধেক দুয়ার খোলা রেখেছে। শহরের প্রধান সড়কের ধারে ফুটপাথে কলা আম তরমুজ আনারস ফলমূলের দোকানে বেচাকেনা হচ্ছে। লেবু আদা রসুনওয়ালারাও বসেছে। কাঁচাবাজার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত খোলা। এরপর শহরের পথের ধারে বসে। হোটেল রেস্তরাঁ খোলা। অনেকের মাস্ক নেই। সাধারণ মানুষের ভয়ডর চোখে পড়ছে না। সচেতনতাও নেই। ঋতু পরিবর্তনের পালায় জ¦র জারি সর্দি কাশি দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকগণ কোভিড পরীক্ষা করতে বলছেন। মাগুরায় লকডাউন চলছে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ১১ম দিনের মতো মাগুরা শহর ও মহম্মদপুর উপজেলায় লকডাউন চলছে। লকডাউনের কারণে শহরের প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেট দেয়া হয়েছে এবং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, রিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুলিশি টহল চলছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ জুন থেকে এই লকডাউন শুরু হয়েছিল। কতদিন লকডাউন চলবে তা বলা হয়নি। বাড়ল নোয়াখালীর আংশিক লকডাউন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নোয়াখালীতে চলমান লকডাউন আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। চতুর্থ দফার এ লকডাউনে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভাসহ একলাশপুর ও মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
×