ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়ে গেছে ৫ একর বনভূমি

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৫ মে ২০২১

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় লাগা আগুন অবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এদিন বৃষ্টি হবার পর আগুনের তীব্রতা কমে যায়। একইসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, সিপিজি সদস্য, বনসংলগ্ন গ্রামবাসীর সর্বাত্মক চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন সম্পূর্ণ নেভেনি। বিক্ষিপ্তভাবে এখানে ওখানে ধোঁয়ার কু-লী উড়ছে, যা নেভাতে চেষ্টা চলছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন বাগেরহাটের উপসহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার দুপুরে বলেন, ‘দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে ৩টি ইউনিটের সহায়তায় পানি দিয়ে আগুন নেভানো শুরু করি। দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানি ও সবার সম্মিলিতভাবে চেষ্টায় আগুন অনেকটা নিভে এসেছে। তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় আগুন জ্বলে উঠছে। ততক্ষণ পর্যন্ত আগুন সম্পূর্ণ নিভে না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত পানি দেয়া হবে।’ এর আগে সোমবার সকাল ১০টার দিকে সেখানে আগুন দেখতে পেয়ে গ্রামবাসী বন বিভাগকে খবর দেন। অগ্নিকা- এলাকায় দেড় কিলোমিটার ঘিরে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদিন বিকেলে বলেন, ‘আগুন প্রায় নিভে গেছে। দু/এক জায়গায় ধোঁয়া দেখা গেলেও তা কিছু সময়ের মধ্যে নিভে যাবে।’ এদিকে অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোঃ মইনুদ্দিন খান এবং পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান। সিএফ মইনুদ্দিন খান বলেন, অগ্নিকা- এলাকা খুবই দুর্গম ও কাছাকাছি পানি না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। আগুন লাগার কারন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। শরণখেলা রেঞ্জের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, এলাকাবাসী বনের মধ্যে আগুনের ধোঁয়া দেখে সোমবার সকাল ১০টার দিকে আমাদের খবর দেয়। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সিপিজি সদস্য, গ্রামবাসী, বন বিভাগের ভোলা ও ধান সাগর ক্যাম্পের সদস্যদের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় দেড় কিমি ফায়ার লাইন কাটা হয়। অগ্নিকা- এলাকায় বড় গাছের পাশাপাশি বলা গাছ ও লতাগুল্ম রয়েছে। তীব্র দাবদাহর কারনে আগুন লাগতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইতোমধ্যে আগুনের কমপক্ষে ৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। মশাল জ্বালিয়ে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করার সময় এ আগুন লেগেছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। স্থানীয় সিপিজির টিম লিডার লুৎফর রহমান বলেন, সুন্দরবনে আগুন লাগলে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আমরা আগুন নেভানোর কাজ করছি। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টের বনে আগুন লেগে পুড়ে যায় ৫ শতক বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম। তথ্যমতে, সুন্দরবনে ১৫ বছরে ২৮ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৬০ একর বনভূমি। ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির লতাগুল্ম পুড়ে যায়।
×