ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ফের ৬ মাস বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ৯ মার্চ ২০২১

খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ফের ৬ মাস বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ ফের ছয় মাস বাড়ছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সোমবার এ সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দেন এবং সেই নথি দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা দ্বিতীয় দফায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে, যা আগামী ২৪ মার্চ শেষ হবে। গত ২ মার্চ পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। সোমবার দুপুরে সচিবালয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের সময়সীমা বাড়ানো এবং বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য যে আবেদন, সেটি আমাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমরা তার সাজা স্থগিতের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছি। যে শর্তগুলো আগে ছিল সেই শর্ত সাপেক্ষে এটা বাড়ানো হয়েছে (শর্তগুলো হলো- তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন)। তবে আবেদনে বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যাপারে লেখা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মতামতে বলা হয়েছে দেশের ভেতরে তিনি যদি বিশেষায়িত চিকিৎসা নেন সরকারের তাতে কোন আপত্তি নেই। আমরা আবেদনপত্রে এই মতামত দিয়েছি। তবে তার হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি, তিনি স্পেশালিস্ট কাকে রাখবেন সেই স্বাধীনতা তার। আগে যে দুটি শর্ত ছিল সেই দুটি শর্তই রয়েছে। তারা বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, এক্ষেত্রে কোন চিকিৎসককে তিনি রাখবেন চয়েজ উইল বি হার, বলেন আইনমন্ত্রী। এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়। এদিন দুপুরে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আগের শর্তে আরও ৬ মাস বাড়ানোর সুপারিশ করে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ মার্চ বেগম জিয়ার দ্বিতীয় দফায় ৬ মাসের মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গত ২ মার্চ দুপুরে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত ও জামিনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধির আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন তার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার। আবেদনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে সেটি পাঠিয়ে দেন সচিবের দফতরে। আবেদনপত্রে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়েছেন তার পরিবার। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দী হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তার কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করে আদালত। নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দীজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে। গত বছর সারা বিশ্বে মহামারী করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
×