ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় দেড় লাখ শিশুর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন

ইতিহাস যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গেল সেই মাহেদ্রক্ষণে

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৮ মার্চ ২০২১

ইতিহাস যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গেল সেই মাহেদ্রক্ষণে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস-২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষে খুলনায় ১৮শ’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার এক লাখ ৫০ হাজার ১৫১ জন শিশুর কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ (অনুকৃতি) উপস্থাপন করা হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জুম ওয়েবিনারের মাধ্যমে শিশু বঙ্গবন্ধুরা সমস্বরে উচ্চারণ করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ইতিহাস যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরে গেল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই মাহেদ্রক্ষণে। রবিবার (৭ মার্চ) বিকেলে খুলনা মহানগরীর সরকারী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ চত্বরে শিশু বঙ্গবন্ধু সমাবেশ ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস উদ্যাপনের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মূল অনুষ্ঠানস্থলে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত এক শ’ ৫১ শিশু বঙ্গবন্ধু (ক্ষুদে শিক্ষার্থী) এর কণ্ঠে এবং একই সঙ্গে সমগ্র জেলা থেকে জুম ওয়েবিনারে সংযুক্ত এক লাখ ৫০ হাজার শিশু বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী ভাষণ। মূল অনুষ্ঠানস্থলে ১৫১ শিশু বঙ্গবন্ধু (ক্ষুদে শিক্ষার্থী) অংশগ্রহণের বিষয়ে জানানো হয় বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ জন, সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর পূর্তি) উপলক্ষে ৫০ জন এবং বাঙালীর একমাত্র অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর ‘নির্দেশক’ হিসেবে একজনকে বেছে নেয়া হয়েছে। খুলনার মূল অনুষ্ঠানে শিশুদের একযোগে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উপস্থাপনা শেষে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতার জন্য এই বাংলায় খণ্ডখণ্ড অনেক বিপ্লব হয়েছে। ক্ষুদিরাম, ফকির মজনুশাহ, তিতুমীর, সূর্যসেন, শরীয়তউল্লাহসহ অনেকেই রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। হাজার বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর যে আকুতি সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে ভাষণ শুনে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী এক সারিতে এসে দাঁড়িয়েছিল তা এই ৭ মার্চের ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণ নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত করেছিল। অথচ একসময় এ ভাষণ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মতো আর কোন ভাষণ এত বেশিবার প্রচার হয়নি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাস বিকৃতির দিন শেষ। খুলনার এই আয়োজন ৭ মার্চ কেন্দ্রিক সবচেয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে যেমন ছড়িয়ে দেবে তেমনি তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে সোনার বাংলা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবীর। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারী অফিসের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারী, আধাসরকারী, সায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খুলনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দফতর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহানগর ও অঙ্গসংগঠনসমূহ, স্কুল-কলেজ, পেশাজীবী সংগঠনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। জাতির পিতাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭ মার্চে প্রদত্ত ভাষণ প্রচার করা হয়। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে নিজস্ব কর্মসূচী উদ্যাপন করেন। শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বিষয়ে আলোচনা সভায় আয়োজন করা হয়। সরকারী, আধাসরকারী সায়ত্তশাসিত, বেসরকারী ভবন ও স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়। খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। খুলনা জেলা তথ্য অফিস বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক ডকুমেন্টারি ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। খুলনা জেলার সকল উপজেলায় অনুরূপ কর্মসূচী পালিত হয়।
×