ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা টিকার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ প্রস্তুত

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০২১

করোনা টিকার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ প্রস্তুত

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে একটি ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করেছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। আগামী ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে এই সফটওয়্যারটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু করবে ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। আগামী দুতিন দিন আইসিটি বিভাগের ‘সফটওয়্যার এ্যাসুরেন্স ল্যাবে’ চলবে সফটওয়্যারটির মান যাচাই বাছাই। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকেই সফটওয়্যারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে তুলে দেয়া হবে। জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের নানা কার্যক্রম। এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ প্রস্তত ও প্রয়োগ করেছে ভাইরাসের ভ্যাকসিন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ভ্যাকসিন বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছাছে। ভ্যাকসিনগুলো পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দেশে এসেছে। ভারতীয় হাইকমিশন টিকাগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা করেছে। এই টিকার সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ‘সুরক্ষা’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এখন এ্যাপটি ট্রায়ালে রয়েছে। ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘সুরক্ষা’ হস্তান্তর করা হবে। সরকারী এসব ভ্যাকসিন সুষ্ঠুভাবে প্রদানের জন্য ওই দিনই উন্মুক্ত করা হবে ‘সুরক্ষা’ এ্যাপটি। করোনা ভ্যাকসিনের অনলাইন নিবন্ধন ও যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণে এ্যাপটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সম্মুখ সারির মানুষকে দেয়া হবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সকলকেই আনা হবে ভ্যাকসিনের আওতায়। পলক জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি একটি মহল ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ও জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে এ্যাপ তৈরিতে ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু বিষয়টি পুরোটাই মনগড়া। প্ল্যাটফর্মটি তৈরিতে কোন অর্থ খরচ হয়নি। আইসিটি বিভাগের কর্মরত প্রোগ্রামাররাই এটি তৈরি করেছেন। এখানে কোন টাকা খরচের প্রশ্নেই উঠে না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের টিকা চলে এসেছে। এখন এই টিকা বিতরণ কার্যক্রমও শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এ্যাপের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষকে এ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা নিতে হবে। এ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে হবে। কিভাবে কখন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, তা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়ে দেবে। কখন কোথায় ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে, তা এ্যাপের মাধ্যমেই মনিটরিং করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এই এ্যাপটি স্বাস্থ্য বিভাগকে সরবরাহ দেবে। প্রথম তিন মাসের মধ্যে করোনার টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা পেশাজীবী ও বয়স্করা। বাদ যাবে ১৮ বছর বয়সের নিচে থাকা শিশুরা। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এর বিতরণ কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় শুরু করা হবে। দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকারের গঠিত কোভিড-১৯ জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটিই অনুসরণ করবে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে পাবেন। একই সঙ্গে বয়সভিত্তিক টিকা দেয়া হবে। করোনার জন্য বয়স্ক ব্যক্তিরা ছাড়াও ঝুঁকির মধ্যে আছে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হবে।’ তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সর্বক্ষণিকভাবে কাজ করবে। সাধারণ মানুষ কিভাবে এই টিকা পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করবে, সেটিরও একটি পরিকল্পনা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের রয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এ এস এম আলমগীর ইতোমধ্যে লিস্টটা আইসিটি মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। একটি এ্যাপের মাধ্যমে তারা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে। রেজিস্ট্রেশন করতে হলে তখন জাতীয় পরিচয়পত্রও লাগবে। যেহেতু ১৮ বছরের নিচে ভ্যাকসিন ইস্যু করা হবে না, সেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র এখানে লাগবে। হতে পারে এক থেকে দুই শতাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকবে না। সেখানে জন্মনিবন্ধনটাকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। রেজিস্ট্রেশন করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডাটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে চলে আসবে। তখন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কখন ভ্যাকসিন পাবেন, সেই তথ্যও জানিয়ে দেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি জানিয়েছে, এ্যাপটি পুরোপুরি প্রস্তুত করতে আর দু’ একদিন সময় লাগবে। এখন ল্যাবে এই এ্যাপের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। এ্যাপটি নির্ভুলভাবে কাজ করছে। আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য দু’ একটি ২৪ ঘণ্টা ল্যাবে পরীক্ষার কাজ চালানো হবে। এরপরই এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এ্যাপটি হস্তান্তর করেই কাজ শেষ করবে না তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ একযোগে কাজও করবে।
×