বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও উৎসব আমেজে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে যারা (বিএনপি) মিথ্যাচার করেছে, তার জবাব দিয়েছে দেশের জনগণ। ডিজিটাল প্রযুক্তি (ইভিএম) ব্যবহারে জনগণ ইতোমধ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও বিএনপির মানসিকতা এখন এনালগ রয়ে গেছে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির অবিরাম মিথ্যাচার দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না।
শনিবার বিকেলে তাঁর সংসদ ভবনের সরকারী বাসভবনে তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন পরবর্তী তাৎক্ষণিক ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, দেশের ভোটের সংস্কৃতি নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার ভোটারগণ।
তিনি বলেন, বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীও যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন সেখানে অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি আহ্বান জানাব যে, নিজ দলের প্রার্থীর কথা অনুধাবন করুন।
বসুরহাটে যে নির্বাচন হয়েছে এমন নির্বাচনই চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ নির্বাচনকে অনেকেই স্বচ্ছতার জন্য ‘বসুরহাট মডেল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিএনপি ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে মাঝেমধ্যে, তারা কল্পিত অভিযোগ এনে ভোটের মাঠ ত্যাগ করে তাদের চর্চিত নেতিবাচক রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে রাখার অপচেষ্টা করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোটারদের এবং নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নির্বাচন নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবে, তবুও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমি সকল প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানাই।
বিএনপি উদ্দেশ্যমূলক বিরোধিতা করলেও দেশের জনগণ অত্যন্ত সাবলীলভাবে ইভিএম-এ ভোট প্রদান করছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে জনগণ ইতোমধ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও বিএনপির মানসিকতা এখনও এনালগ রয়ে গেছে। তাই তারা এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, বিএনপি মুখে স্বচ্ছতার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে প্রযুক্তিবিমুখ এবং পিছিয়ে পড়া ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে চায়।
নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেখানেও অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের পরিবেশ ও ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে আমি মনে করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথমবারের মতো বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম-এ ভোট হয়েছে এবং ৬০ ভাগের বেশি ভোটার উপস্থিত ছিলেন। অথচ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে যেসব কথা বলেছেন, তার জবাব আমি না দিলেও বসুরহাট পৌরসভার ভোটারগণ শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর জবাব দিয়েছেন।
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে অপপ্রয়াস অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি, তা আর হালে পানি পাচ্ছে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণ এখন আর বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারে বিশ্বাস করে না। বিএনপি ভোটে হারার আগেই হেরে বসে থাকে, তারা রাজপথ ভয় পায়, আন্দোলনেও ভয় পায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোথায় কে, কি বলল সেটা বিষয় নয়, আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। আমরা আদর্শের রাজনীতি করি। জনগণের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। তাই পরিবারের কে, কোথায় কি বলল, সেটা বিষয় নয়। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ পরিবারে, আবার গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের জন্য শাস্তির বিধানও যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়; যা বিএনপির রাজনৈতিক চর্চায় নেই।
উল্লেখ্য, নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা এলাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়েছে। এই পৌরসভায় তাঁরই ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে তাঁর কিছু বিস্ফোরক মন্তব্যে আওয়ামী লীগসহ পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনেই ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি করে।
