ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রায়পুরের দুই ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

রায়পুরের দুই ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় দুটি ইউনিয়নের ২৬টি স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। উপজেলার উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী ও সংযোগ খাল থেকে রাজনৈতিক মদদে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বালু তুলে বাণিজ্য করছেন। এতে নদীভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি মানুষের ঘর-বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালুদস্যুদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রায়পুর উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় ইউপি চেয়ারম্যানরা একাধিকবার বিষয়টি উপস্থাপন করলেও কোনো সুফল আসেনি। বরং প্রভাবশালীদের হুমকির ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী থানায় জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন। এদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও যেন কেউ কানে তুলছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার ও পুলিশের সহযোগিতায় বালু তোলা হচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে লোক-দেখানো অভিযানে নামে প্রশাসন। তারা অভিযান পরিচালনা করে উপজেলায় ফেরার পরই শোনা যায়, উত্তোলন কার্যক্রম আবার শুরুহয়ে গেছে। ইউপি কার্যালয় সূত্র ও সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার উত্তর চরবংশীতে ১১ জন ও দক্ষিণ চরবংশীতে ১৫ জন ব্যক্তি নদী ও সংযোগ খাল থেকে বালু তুলছেন। তাদের নাম-পরিচয় ডিসি ও ইউএনওকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বালুদস্যুরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। তারা হলেন উত্তর চরবংশীর চরইন্দুরিয়া গ্রামের বিল্লাল কবিরাজ, আবু তাহের বেপারী, চরঘাসিয়া গ্রামের জাকির হোসেন বেপারী, চর আবাবিলের আবদুস সাত্তার বেপারী, চরবংশী গ্রামের মিজান বেপারী, কাজল বেপারী, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ আলী খাঁ, জুলহাস মোল্লা, জালাল সর্দার ও তৌহির মাতাব্বর। দক্ষিণ চরবংশীর চরকাচিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দিদার হোসেন মোল্লা, মঞ্জু হোসেন মোল্লা, আলমগীর হোসেন, জুলহাস মোল্লা, জামাল সর্দার, আবুল হাসেম, মফিজ সরকার, চরলক্ষ্মী গ্রামের রফিকুল ইসলাম আখন, ফজলুর করিম বহরদারসহ ১৫ জন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, কেউ প্রকাশ্যে বালু তোলার প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। বালু কারবারিরা মূলত আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মাসোহারা দিয়ে এটি করছেন। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী আবু তাহের বেপারী ও বিল্লাল কবিরাজের ভাষ্য মতে, এক মাস ধরে তারা বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছেন। প্রশাসনকে সময়মতো মাসোহারা না দিলে তারা বালু তোলার পাইপ কেটে ফেলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার আলী আহম্মদ বলেন, ‘সরকার আমাকে তো নদী পাহারার দায়িত্ব দেয়নি। তার পরও বিভিন্ন সময় অভিযানে গিয়ে পাঁচটি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে।’ দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রভাবশালীরা কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করছে। এসবের প্রতিবাদ করায় তাঁরা আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ নিয়ে থানায় জিডিও করেছি। কিন্তু প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা চাইলে আমরা কাজ করব। রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড আখতার জাহান সাথী বলেন, ‘মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তহশিলদারের বিরুদ্ধে বালু উত্তোলনকারীদের মদদের অভিযোগ আসলেও কেউ তথ্য-প্রমাণ দিতে রাজি হয়নি। তার পরও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ড্রেজার ধ্বংস করেছি। বাকিগুলোও করা হবে।’
×