ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলাগুলোয়

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলাগুলোয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগের দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তারা জানায়, শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তার লাভ করে রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু আকারে বয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দেশে রাতের ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এই সময়ে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশা উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি। এছাড়া এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা এই ব্যবধান কম হওয়ার কারণে রাজধানীতের শীতের অনুভূতি বেড়েছে। দিনাজপুর ॥ পৌষের শুরুতে তেমন শীত না থাকলেও মাঝে কয়েক দিন ও মাঘের শুরুতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কনকনে শীত জেঁকে বসেছে জেলাজুড়ে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। বীজতলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু অবস্থা শিশু ও বৃদ্ধারা। বুধবার থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ গোটা উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবেই কাঁপছে দিনাজপুরবাসী। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে আরও ২/১ দিন এমন শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকবে। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জুর হোসেন জানায়, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় ঠাণ্ডার পরিমাণ বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সকাল ৯টায় তা আরও কমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে ৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রার সঙ্গে পশ্চিমা বাতাস বয়ে যাওয়া কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। এ ঠাণ্ডা আরও ২/১ দিন থাকবে। রবিবারের পর ঠাণ্ডা কিছুটা কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। কুড়িগ্রাম ॥ ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। জেলায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কাজে যেতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার ৪শ’ শতাধিক চরাঞ্চলের হতদরিদ্র পরিবারগুলো। তীব্র শীত কষ্টে রয়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত রোগে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ২শ’ ৫৩ রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধ। এর মধ্যে ২৯ শিশু ডায়রিয়ায় আর ৮ জন নিউমোনিয়ায়। এ তথ্য দিয়েছেন কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ পুলক রায়। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা না মেলায় নিম্নগামী হয়ে পড়ছে রাতের তাপমাত্রা। সন্ধা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। এ অবস্থা চলছে পরের দিন ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের ছলিমা বেগম জানান, খুবই ঠাণ্ডা পড়েছে। আমরা দিনমজুর মানুষ। প্রতিদিন কাজ চলে না। টাকা পয়সা নাই গরম কাপড় কিনতে পারছি না। ৪টা বাচ্চা নিয়ে শীতের মধ্যে খুব কষ্টে আছি। আমাকে কেউ কোন কম্বল দেয় নাই। একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ভোলা মিয়া জানান, আমার ওয়ার্ডে প্রায় ১৮শ’ মানুষ। আমি সরকারী কম্বল পেয়েছি মাত্র ২৭টি। যা মাত্র ২৭ জনকে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী সরকার জানান, শীতের শুরুতে সরকারী ৬শ’ ৪০টি কম্বল পেয়েছি যা ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই চরাঞ্চল এবং প্রায় সব মানুষই হতদরিদ্র। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, শীতের শুরুতেই ৩৫ হাজার কম্বল জেলার ৭২ ইউনিয়নসহ পৌরসভাগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে ৯ উপজেলার প্রত্যেক উপজেলার জন্য শীতবস্ত্র কেনার জন্য ৬ লাখ করে টাকা ও ১ হাজার করে শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে এই টাকায় শীত বস্ত্র কিনে বিতরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ আমি আরও ৫ লাখ টাকার শীত বস্ত্রেও বরাদ্দ পেয়েছি। এবং তিন পৌরসভায় আরও সাড়ে ৫ লাখ টাকার ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমার কাছে এখনও ১ হাজার কম্বল মজুদ আছে। যা খুব তাড়াতাড়ি বিতরণ করা হবে।
×