ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উনিশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সব্যসাচী দাশ

ভাল সিনেমা-ভাল দর্শক-ভাল সমাজ

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

ভাল সিনেমা-ভাল দর্শক-ভাল সমাজ

ভাল সিনেমা, ভাল দর্শক, ভাল সমাজ- এই স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ১৬ জানুয়ারি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উনিশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আয়োজনে রেইনবো ফ্লিম সোসাইটি। করোনা উত্তর (যদিও কথাটা আপাতত যথাযথ নয়) নিউ নরমাল এই সময়ে, চলচ্চিত্রের মতো জীবন্ত শিল্পের আন্তর্জাতিক উৎসব নিশ্চয়ই বিরাট ব্যাপার! ৭৩ দেশের ২২৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে উৎসব চলবে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় জাদুঘর অডিটোরিয়াম এবং স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা প্রদর্শিত হবে। ঘরে বসে অনলাইনেও দেখা যাবে উৎসবের সিনেমা। প্রসঙ্গে আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামালের সঙ্গে। তিনি জানান, করোনার কারণে বিদেশী কোন অতিথি আসছেন না। তবে তারা অনলাইনে অংশগ্রহণ করবেন। এবারের উৎসব বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে উৎসর্গ করা হবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেইঞ্জড দ্য ওয়াল্ড’ এই ধারায় লেলিন, ফিদেলকাস্ত্রো, ইয়াসির আরাফাত, মার্সাল টিটো, মহাত্মা গান্ধী এবং আমাদের জাতির পিতার ওপর সিনেমা দেখানো হবে। উৎসব, সব সময় আনন্দের হয়। বিশেষ করে বিনোদন বা শিল্প সংস্কৃতির মূলধারা চলচ্চিত্র বিষয়ক উৎসব- সে তো আরও বড় ব্যাপার। মনুষ্য সমাজ, সভ্যতা বা বিশ্বায়নের মতো বিস্তার বিষয়গুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলমান ফ্রেমে বন্দী করে, শ্রেণী ভেদে মানুষের মধ্যে শান্ত কিংবা চঞ্চল অনুভূতি জাগরণে চলচ্চিত্র অদ্বিতীয়। চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতির সব উপাদান! শিল্পের মহীরুহ বলা হয় এই মাধ্যম কে। বিশ্ব চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তুলনামূলক নবীন। আমাদের এই শিল্প সবসময় নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে অনবরত চেষ্টা চালাচ্ছে। অসংখ্য শিল্প প্রেমিকও আমরা পেয়েছি এই মাধ্যমে। সময় পেরিয়ে আমাদের এখন বিশ্বদরবারে জানান দেয়ার পালা। যদিও এই চেষ্টার বয়স একেবারেই কম নয়। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা আমাদের বেশিরভাগ সময়ে পেয়ে বসে। এই যেমন, বর্তমান সময়ের অস্থিরতার মধ্যে একটি সার্থক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব করা ভীষণ সময় উপযোগী। যেখানে বিভিন্ন মহল থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে এতবড় একটা আয়োজনে কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই! এই প্রসঙ্গে আহমেদ মুজতবা বলেন, এই উৎসব পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে অর্থ দেয়া হয়েছে তার ষাট ভাগ আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। তবে তা প্রয়োজনের থেকে কম। ভেবে রেখেছি অনুষ্ঠান শেষে টাকা-পয়সা নিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে মনোমালিন্য হবে। এই আর কি। গত ২৯ বছর ধরে এই উৎসব আয়োজন করে আসছি, কিন্তু প্রতিবারই একই সমস্যা বারংবার ফেস করতে হচ্ছে। উৎসবের জন্য যেসব ভ্যানু ব্যবহার করা হয় এগুলো আমাদের পছন্দের কিন্তু সিনেমা প্রজেকশনের জন্য যথাযথ নয়। সেই ৯২ সাল থেকে বলে আসছি, প্রেস মিট করছি, কিন্তু কে বলবে উর্ধতনের কাছে, এমন আন্তর্জাতিক উৎসবের গুরুত্বের কথা। এদিকে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করে সঙ্গীতশিল্পী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা অঞ্জন দত্ত বলেছেন, করোনা অতিমারিতে যেখানে দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসব হয় বন্ধ নয়তো অনলাইনে হওয়ার পথে সেখানে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব যদি প্রতি বছরের মতো তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে তা হলে এর থেকে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। স্মৃতি হাতড়ে পরিচালকের বলেন, এর আগে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে আমার অভিনীত পুরনো ছবি দেখানো হয়েছে। গত বছর প্রথম যাই আমার ‘ফাইনালি ভালবাসা’ ছবিটি নিয়ে। গিয়ে দেখেছিলাম, পুরনো কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর হুবহু ছবি যেন উঠে এসেছে ঢাকার এই উৎসবে। অঞ্জন আরও বলেন, এখানেও নানা দেশের পরিচালক, অভিনেতা, সাংবাদিকরা আসেন। ছবি দেখেন। ডিনার হয় ছবি নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে। আলাদা সম্মেলন করে ছবি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি হয়ে গেলে ঢাকার ছাত্ররা দরকারে মাটিতে বসে পড়ে ছবি দেখতেও দ্বিধা করেন না। সিনেমার প্রতি ভীষণ প্রেম আমাদের বহু পুরনো। স্মৃতি ঘাটলে অসংখ্য গল্প বেরিয়ে আসবে। আমরা শিল্পে বাঁচি, বাঁচতে চাই কিন্তু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের বার বার চিন্তায় ফেলে।
×