ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আয়ের মানুষকে কম দামে সরবরাহই লক্ষ্য

এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করবে ঢাকা ওয়াসা

প্রকাশিত: ২২:২২, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করবে ঢাকা ওয়াসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আয়ের মানুষকে কম দামে পানি সরবরাহ দিতে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে ঢাকা ওয়াসা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরীর সব মানুষ আর এক দামে পানি পাবেন না। তখন উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষকে পানির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি দিতে হবে। বর্তমান দামে পানি পাবেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা ওয়াসা, ‘দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)’ ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান এমন কথা বলেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনিও এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। নিম্ন আয়ের এলাকায় (বিশেষ করে বস্তিতে) ৭ হাজার ৪৮৩ বৈধ গ্রাহকের মধ্যে ২৫ গ্রাহককে সম্মাননা দেয়া হয়। তারা নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করেছেন। নিম্ন আয়ের এলাকার ‘আদর্শ গ্রাহক’দের সম্মাননা জানাতে ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, মূলত ২০১১ সাল থেকে ঢাকার বস্তিতে এলাকায় বৃহৎ পরিসরে বৈধ পানির সংযোগ দেয়া শুরু হয়। এখন শহরের বিভিন্ন বস্তিতে ৭ হাজার ৪৮৩টি বৈধ সংযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বস্তিতে বৈধভাবে পানির সংযোগ দেয়া হবে। বস্তি এলাকায় বৈধ পানির সংযোগ দেয়ার জন্য ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পে ওয়াসার সঙ্গে কাজ করছে ডিএসকে ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ নামের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এমডি তাকসিম এ খান বলেন, বর্তমানে পানির উৎপাদন খরচের চেয়ে বিতরণের খরচের পরিমাণ অনেক কম। উৎপাদন খরচ কমাতে না পারলে ওয়াসার লোকসান গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে পানি সরবরাহ করা হয়। এতে বিপুল টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, এই ভর্তুকি উচ্চবিত্তরাও পাচ্ছেন। যদিও তাদের তা পাওয়া উচিত না। আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছি, এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করব। তবে বিষয়টির এখনও কোন চূড়ান্ত কিছু হয়নি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহারের পানির দাম বাড়বে না। আবার তাদের পানির দাম কমানো হয়ত সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় পানির দাম বাড়বে। ২০১০ সালে ঢাকা শহরের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ বৈধ পানির সংযোগের বাইরে ছিল। এখন ঢাকার প্রায় শতভাগ মানুষ বৈধভাবে পানি পাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের বিল পরিশোধের প্রবণতা সম্পর্কে তাকসিম এ খান বলেন, টাকার অভাব নেই এমন গ্রাহকদের কাছে ৭০ লাখ টাকা পানির বিল বকেয়া আছে। অথচ নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কোন বকেয়া নেই। যাঁরা সক্ষম, তারা বিল দেন না। যাঁরা সক্ষম নন, তারা সঠিকভাবে পানির ব্যবহার করেন। তারা নিয়মিত বিলও দেন। প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এলাকাভিত্তিক পানির দামের উদাহরণ টেনে বলেন, ঢাকায় এক হাজার লিটার পানি ১৪ টাকায়, চট্টগ্রামে ১২ টাকায় সরবরাহ করা হয়। ভারতের দিল্লীতে (মূল শহরে) এক হাজার লিটার পানির দাম নেয়া হয় ৪৩ রুপী। তবে দিল্লীর শহরতলিতে পানির দাম কম। কারণ, শহরতলিতে নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করেন। সম্মাননা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী উত্তম কুমার রায়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ডিএসকের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মাহমুদুর রহমান ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরবরাহ করা পানির দাম কমাতে ঢাকা ওয়াসা প্রতি আহ্বান জানান।
×