ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত মাস্ক না পরলে জেলও হতে পারে ৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি- খসড়া নীতিমালা অনুমোদন

বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেবে সরকার ॥ অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ কেনা হচ্ছে সিরাম থেকে

প্রকাশিত: ২২:১৭, ১ ডিসেম্বর ২০২০

বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেবে সরকার ॥ অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ কেনা হচ্ছে সিরাম থেকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কিনে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হবে। প্রত্যেকের জন্য দুই ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। সে হিসাবে দেশের দেড় কোটি মানুষ বিনামূলে এই টিকা পাবেন। পাশাপাশি সর্বোচ্চ জরিমানায় কাজ না হলে মাস্ক না পরার অপরাধে জেল দেয়া হবে। এছাড়া জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে শাস্তির বিধান রেখে এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৯৯৯ অপারেট করার জন্য পুলিশের একটি আলাদা ইউনিটও গঠন করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোভিড-১৯ সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে করে হোক দেশের সকল মানুষের জন্য করোনা প্রতিরোধ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হবে। এখন আমাদের সব চেয়ে বড় কাজ দ্রুত ভ্যাকসিন এনে তা সর্বত্র সরবরাহ করা। দ্রুত এই পদক্ষেপ নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আগামীকাল বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেলে দ্রুত করোনা প্রতিরোধ ভ্যাকসিন আমদানি করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অক্সফোর্ডের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। তিনি বলেন, গত ১৪ অক্টোবর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য অক্সফোর্ডের তৈরি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩ কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। গত ৫ নবেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ১৬ নবেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাব চলে এসেছে। ভ্যাকসিন কারা পাবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন আছে। প্রথম কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে সে অনুযায়ী তারা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) একটা পরিকল্পনা তৈরি করছে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় রয়েছেন- পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছেন, তারপর বয়স্ক লোক, শিশু- এ রকম একটা পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, মানুষকে এ ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়া হবে। টাকা সরকার পরিশোধ করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেয়া হবে। ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার কত টাকায় ভ্যাকসিন কিনছে, জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ক্রয়ের চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। অন্যান্য ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আরও অনেক ভ্যাকসিনের বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যোগাযোগ রাখছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি কার্যকর হবে। আমাদের এক নম্বর শর্ত হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে। চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের টিকার ট্রায়াল হওয়ার কথা ছিল, সেটি কোন পর্যায়ে আছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা বাতিল করিনি। ওরা একটা টাকা চাচ্ছে। সরকার এখনও দেয়নি বা রাজি হয়নি। আমরা সেটা এখনও বাতিলও করিনি। প্রথমে টাকা চায়নি, পরবর্তীতে টাকা চাচ্ছে। মাস্ক না পরলে জেলও হতে পারে ॥ সর্বোচ্চ জরিমানায় কাজ না হলে মাস্ক না পরার অপরাধে জেল দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগেই আমরা বলেছি, এই সপ্তাহ থেকে (যারা মাস্ক পরছে না তাদের বিরুদ্ধে) আরও একটু কঠোর সিদ্ধান্তে যাব। আমার মনে হয়, ঢাকার বাইরে অবস্থা ভাল। ডিসিরা বলছেন, জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি সচেতন হচ্ছে। ঢাকা শহরে বোধহয় এখনও পুরোপুরি সচেতন হয়নি। তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে যে, (মাস্ক না পরলে) জরিমানা হয়ে যাবে, জরিমানা দিতে হবে ৫০০ টাকা। এখন থেকে সর্বোচ্চ জরিমানা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে কাজ না হলে আমরা আরও কঠোর নির্দেশনা দেবো। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। প্রয়োজনে শাস্তি হিসেবে জেলও দেয়া হতে পারে। কী করবে, মানুষ যদি না শোনে তা হলে আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না, আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে, আমরা বলে দিয়েছি। আমরা আর ৭ থেকে ১০ দিন দেখব, তারপর নির্দেশনা দিয়ে দেব- আরও কঠোর শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হবে। যথাসম্ভব বেশি করে জরিমানা করা হবে এবং কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। ৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি ॥ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে শাস্তির বিধান রেখে এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৯৯৯ অপারেট করার জন্য পুলিশের একটি আলাদা ইউনিটও গঠন করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নীতিমালা-২০২০’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সেবা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আরও কার্যকর করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জনজীবনের সফলতা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করে ইর্মাজেন্সি সার্ভিস পলিসি ৯৯৯ তথা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে জরুরী পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সঙ্কটাপন্ন মানুষকে যাতে সহায়তা করা যায়, দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়। অপরাধের শিকার কোন ব্যক্তি বা সম্পদ উদ্ধার করা যেন সহজ হয়। দুর্ঘটনায় নিপতিত মানুষকে যাতে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা এবং জানমালের উদ্ধারসহ দ্রুততম সময়ে যাতে দুর্গতদের হাসপাতালে পাঠানো ও সেবা দেয়া যায়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নামে একটি ইউনিট গঠিত হবে। এতে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা যিনি জাতীয় জরুরী সেবার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। তিনি জানান, ৯৯৯ নম্বরে যদি কেউ মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয় তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত হবে। বাচ্চা বা কেউ যদি না বুঝে এ কাজ করে সেটা কনসিডার করা হবে। তবে ইচ্ছা করে যদি কেউ প্রতারণা করতে চায় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। মিথ্যা তথ্য দেয়ার শাস্তি পেনাল কোডে আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কে কোথায় থেকে কল করছে, সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং কেউ সহজে ফলস কল করতে যাবে না। জরুরী সেবার যে নম্বরগুলো আছে যেমন ৩৩৩, ১০৯- এগুলো সব ‘ইন্টার অপারেটিভিটি’ হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জরুরী সেবার যে কোন একটা নম্বরে কল করে যদি কেউ বলে এখানে ডাকাত পড়েছে ওখানে স্বয়ংক্রিভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এটা খবুই কার্যকর করে দিতে হবে। এ জরুরী সেবাটি মূলত প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদের গাইডলাইনে হয়েছে। নীতিমালার ফলে এটা এখন আরও সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সবার সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে একটা যোগাযোগের সিস্টেম থাকবে।
×