স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের দিন ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত মামলাগুলো দায়ের হয়। এসব মামলায় সর্বমোট গ্রেফতার হয়েছে ৩২ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার প্রতিবাদে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে। যার মধ্যে বিএনপিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই অগ্নিসন্ত্রাসের কল রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে। সেই কল রেকর্ডের সূত্র ধরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের দিন ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসন্ত্রাস ও ভোটকেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। ওসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকার নয়টি থানায় মোট ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জন রিমান্ডে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে আসামির সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্য কারিগরদেরও তদন্তপূর্বক আসামি করা হতে পারে। ঘটনাস্থলের সংগৃহীত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া রিমান্ডে পাওয়া তথ্য মোতাবেক সন্ত্রাসের পেছনের কারিগরদের সম্পর্কে তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাদেরও মামলার আসামি করা হবে। প্রকাশ্যে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের ছাড়াও নেপথ্য কারিগরদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনার দিন সাতটি বাসে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে চারটি বাস প্রায় পুরোপুরি পুড়ে গেছে। বাকি তিনটি আংশিক পুড়ে গেছে। আর বাকি তিনটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আগুন লাগানোর চেষ্টার ঘটনায়ও মামলা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে দুটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা। আর একটি মামলা বিস্ফোরক ও পুলিশের কাজে বাধা দানের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। বাকি এগারোটি মামলা করা হয়েছে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার একজন দু’দিনের রিমান্ডে রয়েছে। একই আইনে মতিঝিল থানায় অপর মামলায় গ্রেফতার আরেকজন দু’দিনের রিমান্ডে রয়েছে। শাহবাগ থানার দুই মামলায় ২১ আসামির মধ্যে গ্রেফতার তিনজন। পল্টন থানার বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় এজাহার নামীয় মোট ৩৮ আসামির মধ্যে গ্রেফতার সাতজন। পল্টন থানার এক মামলায় গ্রেফতার একজন, পল্টন থানার আরেক মামলায় এজাহার নামীয় ৩৮ আসামির মধ্যে গ্রেফতার দুই জন। বংশাল থানার মামলায় গ্রেফতার দু’জন, ভাটারা থানার বিস্ফোরক আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ৯৫ জন। এ মামলায় কোন গ্রেফতার নেই। কলাবাগান থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় এজাহার নামীয় ৪৯ আসামির মধ্যে গ্রেফতার দুই জন। তুরাগ থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় এজাহার নামীয় ৩৩ আসামির মধ্যে গ্রেফতার একজন। বিমানবন্দর থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় এজাহার নামীয় ২৮ আসামির কেউ গ্রেফতার হয়নি। উত্তরা পূর্ব থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় এজাহার নামীয় ২৮ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে নয় জন। একই থানায় পৃথক মামলায় এজাহার নামীয় আসামির সংখ্যা ১৯ জন। এ মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ, সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেট, গুলিস্তান, মতিঝিল, বংশালের নয়াবাজার, ভাটারার কোকা-কোলা মোড়, শাহজাহানপুর, বিমানবন্দরের আজমপুরসহ নয়টি স্থানে ১০টি বাসে আগুন দেয়া হয়। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে, বাসে ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাসের নেপথ্য কারিগর বিএনপি-জামায়াত-শিবির বলে এখন পর্যন্ত তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আরও মারাত্মক ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। তারা সারাদেশেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতার কারণে সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিদ হোসেন শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনের প্রতিবাদে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই স্বীকার করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৮ আসনে সংসদীয় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে ২০১৪-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অগ্নিসন্ত্রাসের মিল রয়েছে। টাইমিং ও স্টাইল একই। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নাশকতার ঘটনাটিও তারাই ঘটাতে পারে। ইতোমধ্যেই কিছু টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া সেই কথোপকথনেও অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে সরকার বিরোধীদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: