ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবক্ষয়ের পথে যুব সমাজ

বেগমগঞ্জে মাদকের ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৪ অক্টোবর ২০২০

বেগমগঞ্জে মাদকের ছড়াছড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ২৩ অক্টোবর ॥ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ১৬ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার পাড়ায় পাড়ায় জমজমাট মাদক কারবার। চৌমুহনী শহরসহ উপজেলার সর্বত্র মাদকের সহজলভ্যতার ফলে একদিকে যুবসমাজের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জানা যায়, মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফলে এক সময়ের শান্তির জনপদ বেগমগঞ্জ এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে বেগমগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল। হাত বাড়ালেই যে কেউ পাচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা। মাদক কারবারি ও সেবনকারীদের দৌরাত্ম্য এতই ব্যাপক যে এলাকাবাসী সব সময় তাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা তাদের সুবিধার্থে পাড়ায় পাড়ায় তাদের পক্ষে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অর্থের বিনিময়ে কিশোর গ্যাং বাহিনী তৈরি করে দাপটের সঙ্গে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে আসছে। স্থানীয়ভাবে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পালিত অস্ত্রধারী ক্যাডারদের হাতে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিতসহ হামলা মামলার শিকার হতে হয়। পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীরাও বর্তমানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদকের নেশার টাকা জোগাড় করতে যুবক ও কিশোররা বর্তমানে খুন, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক একাধিক সচেতন অভিভাবক জানান, সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে তেমন সহায়তা পাওয়া যায় না। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’একজনকে গ্রেফতার করলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা মাদক কারবার অব্যাহত রেখেছে। নোয়াখালী জেলার বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীসহ বেগমগঞ্জের বেশ কয়েকটি স্থানে মাদক কারবারিদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এসব কাজে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গ্রাম পুলিশ ( চৌকিদারদের) পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবা,গাঁজা,মদ ও ফেনসিডিল এখন চৌমুহনী শহরসহ বেগমগঞ্জে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলেও আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে এসে বর্তমানে তারা আবার শুরু করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন মহলে মাসোয়ারা দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বাস, মাইক্রোবাস ও বিভিন্ন মাধ্যমে ইয়াবা এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, মিয়াবাজার এলাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে গাঁজা, ফেনসিডিল চৌমুহনী শহরসহ বেগমগঞ্জে প্রবেশ করে। এসব মাদক স্থানীয়ভাবে বিক্রি ছাড়াও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয়ে থাকে। জানা যায়, চৌমুহনী শহরসহ বেগমগঞ্জের বেশ কয়েক স্থানে মাদকের বেচাকেনা অবাধে চলছে। এরমধ্যে চৌমুহনী শহরের গোলাবাড়িয়া ও গোলাবাড়িয়া দীঘির দক্ষিণের এলাকা, পৌর হাজীপুরের কালা মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তা ও দোকানঘর, পূর্ব বাজার (ফেনী রোড), রেল স্টেশন এলাকা, আটিয়াবাড়ি ব্রিজের নিকট, টক্কাপোল এলাকা, মিয়ারপোল এলাকা, করিমপুরের নেত্রকোনা এলাকা, বেগমগঞ্জ পোলের উত্তর ও দক্ষিণ বস্তি এলাকা, কলেজের উত্তরে রসিদের দোকান, কুতুবপুর, একলাসপুর, রমজানবিবি বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ নাজিরপুর পেশকার মার্কেট, মহব্বতপুর, মুজাহিদপুর, জিরতলী বাজার, কেন্দুরবাগ, গাবুয়া পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন, দক্ষিণ নাজিরপুর খানসামার বাড়ি ও এর আশপাশে, কাজিনগর সড়কের মাথা সিএনজি স্টেশন ও অটো রাইস মিল-এর পশ্চিমের এলাকায় বর্তমানে মাদকের অবাধে কেনা- বেচার স্থান। এসব এলাকায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল, গাড়ি নিয়ে মাদকসেবীরা আসে এবং তারা বিভিন্ন বাড়ির সামনে, রাস্তার মোড়ে ও বিভিন্ন স্কুলের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে মাদক কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে প্রকাশ্যে মাদক ক্রয় ও সেবন করছে। এতে করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌর শহরের ফেনী রোড, মন্ডল পাড়া, নাপিতের পোল, রেলগেট, কলেজ রোডের মাথা, রাজাপুরের পোল, রমজান বিবি বাজার ভাটিয়াল বাড়ির রাস্তা, জিরতলী সড়ক, একলাশপুর মাজার সড়ক, মজিব সড়ক, চৌরাস্তা-মাইজদী সড়ক ও গোলাবাড়িয়া এলাকায় এক শ্রেণীর বখাটে ও সন্ত্রাসী যুবকরা ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। মহিলা ও ব্যবসায়ীরা এসব ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে বেশি। এসব এলাকা দিয়ে একাকী বা অপরিচিত কেউ চলাচল করলে বখাটে যুবকরা এগিয়ে আসে এবং তাদের ঘিরে ধরে এবং ওই ব্যক্তির পকেটে জোরপূর্বক ২/৩টি ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে টানাহেঁচড়া করতে থাকে, এক পর্যায়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক কারবারি ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করলেও আইনের ফাঁকফোকরে আদালত থেকে জামিনে এসে আবার তারা তাদের মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে। এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় অভিভাবকরা। যে কোন মূল্যে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে সচেতন জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। টাঙ্গাইল নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, কালিহাতীতে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের অত্যচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের কোনাবাড়ী এলাকার কতিপয় মাদকসেবী যুবকদের অত্যাচারে অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বারবার স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না এই এলাকার সাধারণ জনগণ। পাইকড়া ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পাইকড়া ইউনিয়নের কোনাবাড়ী বাজারের পাশে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, দুইজনের বাড়িতে প্রতিনিয়ত মাদক ও জুয়ার আসর বসে। এলাকাবাসী সমন্বিতভাবে বারবার তাদের দমনের জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আরও জানান, কোনাবাড়ী গ্রামের কুখ্যাত এক মাদক ব্যবসায়ী এ গ্রামের মাদক ও জুয়ার আসরের প্রধান। এর আগে ওই মাদক ব্যবসায়ী একাধিকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়ে আবার সেই মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে স্থানীয় কতিপয় যুবক ইয়াবা, গাঁজা ও মদ বিক্রি ও সেবন করে থাকে। তার কারণে এলাকার যুব সমাজ আস্তে আস্তে মাদকসেবী হয়ে পড়ছে। এছাড়া একই এলাকার একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির ছেলে এদের শেল্টার দেয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। কোনাবাড়ী গ্রামবাসী আরও জানান, আমরা থানায় প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় এমপি সোহেল হাজারীকেও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, কোনাবাড়ী গ্রামে মাদকের বিস্তারের বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অতিদ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×