ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চিঠি তিন মাস এমডির টেবিলে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৮ অক্টোবর ২০২০

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চিঠি তিন মাস এমডির টেবিলে

রশিদ মামুন ॥ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের চিঠি তিন মাস নিজের টেবিলে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। ইআরএলএর দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের এই গতিকে হতাশাজনক বলছেন খোদ জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী। ইআরএল’এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকই দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি। এখন দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে ৬০ লাখ মেট্রিক টনের উপরে। কিন্তু এর বিপরীতে দেশে পরিশোধন করা সম্ভব মাত্র ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আরও ৩০ লাখ মেট্রিক টন জ¦ালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা বাড়াতে ইআরএল ইউনিট-২ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে প্রতি লিটার জ¦ালানি তেলে পাঁচ থেকে সাত টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হয়। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে আলোচনা, অর্থায়ন সংগ্রহের চেষ্টা, চুক্তিসহ নানা জটে আটকে আছে এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, মন্ত্রণালয় নিজে কোন কাজ করে না। সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা বাস্তবায়ন করে। সেক্ষেত্রে কেউ যদি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগী না হয় তাহলে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায়। এক দিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন ব্যয় বাড়ে অন্যদিকে রাষ্ট্রের যে সাশ্রয় বা মুনাফা হওয়ার কথা তাও হয় না। গত শনিবার বিস্ফোরক পরিদফতরের অনলাইন সেবা কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বিদ্যুত জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ইআরএল এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত জুনে সেখানকার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের কাছে তিন মাস রেখে দিয়ে সেপ্টেম্বরে বিপিসির কাছে পাঠিয়েছেন। ইআরএলই দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়ন হতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন প্রকল্পের চিঠি কেন নিজের কাছে তিন মাস রেখে দিতে হবে এমন প্রশ্নও করেন তিনি। ওই দিন প্রতিমন্ত্রী বিপিসির উন্নয়ন প্রকল্পের গতি নেই উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার একটি বৈঠক করার কথা বলেন। মঙ্গলবার ওই বৈঠকে ইআরএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও প্রতিমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পের চিঠি তিন মাস নিজের কাছে রেখে দেয়ার কারণ জানতে চান। মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দেয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ইআরএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এভাবে চিঠি আটকে রেখে প্রকল্পের কাজে বাধা দেয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন। তিনি বৈঠকে জানিয়েছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ ছিল না। এজন্য বিপিসির কাছে চিঠি পাঠাতে দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোঃ আকতারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ইআরএল এর মহাব্যবস্থাপক ডেভেলপমেন্ট, কন্ট্রোল, অপারেশন্স ও প্ল্যানিং এবং প্রকল্প পরিচালক (ফিড ও পিএমসি ফর ই আর এল ইউনিট-২) মোঃ আনোয়ার সাদাতের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত জুনে দর বৃদ্ধির প্রস্তাবের চিঠি দিয়েছিল উল্লেখ করে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিটের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইআরএল। ওই সময় বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে। এতে সব মিলিয়ে বিপিসির খরচ হবে ১৭ হাজার ৭১৩ হাজার কোটি টাকা। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত জ্বালানি বা ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হয়। বর্তমানে এটি ধারণ ক্ষমতার ৯৬ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি পরিশোধন করতে পারে। দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩০ লাখ টন। এতে ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। প্রসঙ্গত ইআরএল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর একটি কোম্পানি। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের প্রস্তাব কোম্পানির বোর্ডে অনুমোদনের পর তা বিপিসির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। বিপিসির অনুমোদনের পর জ¦ালানি বিভাগেরও অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
×