ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অসময়ের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

অসময়ের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছেই। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অসময়ের এই বন্যায় কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল, ভেসে গেছে পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। উত্তরের বেশ কয়েক জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানির নিচে। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়বে। এই সময়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তারা জানান, দেশের সমতলে পর্যবেক্ষণকৃত ১০১টি স্টেশনের মধ্যে সোমবার পানি বেড়েছে ৫১ পয়েন্টে। কমেছে ৪২ পয়েন্টে। অপরিবর্তিত রয়েছে আটটি স্টেশনের পানি। অসময়ে এসে নদীগুলোর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। দেশের আট এলাকায় সাতটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বইছে। কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি, বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীর পানি, চকরহিমপুরে করতোয়া নদীর পানি, সারিয়াকন্দিতে যমুনা নদীর পানি, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি, দিনাজপুরে পূনার্ভবা নদীর পানি, নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই এবং আত্রাইয়ে আত্রাই নদীর পানি এখন বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও দেশের ভেতরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অসময়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যা স্বল্প মেয়াদী হতে পারে। তবে স্বল্প মেয়াদী হলেও এই বন্যার প্রকোপে কৃষক এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষক যখন সোনালি ফসলের স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখনই অকাল বন্যায় তাদের স্বপ্নকে দুরাশায় পরিণত করেছে। রাজশাহী ॥ বন্যার কবলে পড়েছেন বাগমারার ২০ হাজার মানুষ। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি বাড়ায় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষ গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের প্রবল বৃষ্টির কারণে রাজশাহীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। বাগমারার গনিপুর, বাসুপাড়া, কাচারী কোয়ালীপাড়া, দ্বীপপুর, বড়বিহানালী, ঝিকরা ও যোগীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানিতে কোটি কোটি টাকার পানবরজ ডুবে গেছে। হাজার হাজার একর পাকা ধান, পাট ও সবজি খেত বন্যায় ভেসে গেছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। গৃহপাালিত পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। এদিকে উজানের ঢলে রাজশাহীর পদ্মায় আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে পদ্মায় প্রায় এক মিটার পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১৫ দশমিক ৬২ মিটার। সোমবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ২১ মিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার দুই দশমিক ২৯ মিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বদরগঞ্জ, রংপুর ॥ অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে পৌর এলাকাসহ চার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানির নিচে। এ কারণে সহ¯্রাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ ও পানিতে ভেসে গেছে কয়েক শ’ পুকুরের মাছ। সোমবার সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে পৌর এলাকার কুমারগাড়ি, যুগীপাড়া, বুড়াপাড়া, ডাঙ্গাপাড়ার একাংশ, শাহপাড়া, মাস্টারপাড়া, শাহাপুরের একাংশ, যাদুনগর, বালুয়াভাটার একাংশ এখন পানির নিচে। এছাড়া পানিতে তলিয়েছে শহরের গরুহাটি এলাকা। উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম মোস্তফা মোঃ জোবাইদুর রহমান বলেন, দু’হাজার ২৭৫ হেক্টর আমনখেত এবং ৫০ হেক্টর সবজিক্ষেত পুরোপুরি পানিতে তলিয়েছে। নওগাঁ ॥ গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদীর পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে আবারও বন্যাতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টানা দেড় মাসেরও বেশি সময় বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধের পর উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা নতুন করে চাষাবাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু এই পানি বৃদ্ধির ফলে অনেকের দ্বিতীয় দফায় লাগানো ক্ষেতের আমন ধান তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আত্রাই নদীর পানির এই হ্রাস-বৃদ্ধিতে নদীর অরক্ষিত তীরে ভাঙ্গনের আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যায় ফসল হারানো কৃষক দ্বিতীয় দফায় আবার নতুন ফসল লাগানোর প্রস্তুতি নিলেও তারা এখন আতঙ্কে আছে। বেশ কয়েক দিন ধরে নদীর পানি বাড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
×