ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহজালালে সৌদি যাত্রীদের ভিড় ॥ টোকেন পদ্ধতি বাতিল দাবি

কঠিন শর্তের বেড়াজালে সিঙ্গাপুরগামী যাত্রীরা

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

কঠিন শর্তের বেড়াজালে সিঙ্গাপুরগামী যাত্রীরা

আজাদ সুলায়মান ॥ কঠিন শর্তের বেড়াজালে পড়েছেন সিঙ্গাপুরগামী যাত্রীরা। সেখানকার চাঙ্গি বিমানবন্দরে অবতরণের পর পরই যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে; যার জন্য ব্যয় করতে হবে ২২ শ’ ডলার। আগামী ১ অক্টোবর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ মোকাব্বির হোসেন বলেন, বিমানের মোবাইল এ্যাপস, ওয়েবসাইট, ট্রাভেল এজেন্ট কিংবা বিমানের সেলস কাউন্টার থেকে টিকেট ক্রয় করা যাবে। জানা গেছে, করোনা তা-বের পর প্রথমবারের মতো চালু হতে যাওয়া সিঙ্গাপুরগামী যাত্রীদের বেশ কিছু শর্তের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে। সিভিল এভিয়েশন অথিরিটি অব সিঙ্গাপুর (সিএএএস) প্রদত্ত এসব শর্তানুযায়ী শর্ট টাইম ভিসাধারীদের অবশ্যই মেডিক্যাল সনদ বাধ্যতামূলক। তবে সিঙ্গিপুরের নাগরিক বা পিআর ধারীদের জন্য কোন অনুমতি লাগবে না। তবে ওয়ার্ক পারমিট বা দীর্ঘস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থী হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র লাগবে। ট্রানজিট যাত্রীদের বেলায় অবশ্যই গন্তব্য দেশের অনুমতি, অনওয়ার্ড টিকেট ও লাগেজের চেকইন করা থাকতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে অনেক জটিল শর্ত। বাংলাদেশ থেকে যাবার সময় কোন কোভিড সনদ লাগবে না। তবে বিমানবন্দরে তাকে ঘোষণা দিতে হবে- কোভিডের লক্ষণ যেমন সর্দি, জ্বর-গলাব্যথা, হাঁচি, কাশি ও নাক ঝাড়ার মতো কোন উপসর্গ নেই। সর্বোপরি সব ধরনের যাত্রীকেই সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমান বন্দর থেকে সরাসরি যেতে হবে সুনির্দিষ্ট হোটেলে যেখানে থাকতে হবে ১৪ দিনের আইসোলেশনে। এজন্য হোটেল ও অন্যান্য সেবা বাবদ ব্যয় পরিশোধ করতে হবে ২২ শ’ সিঙ্গাপুরী ডলার। এসব যাত্রীকে সেখানকার বিমানবন্দরে কেউ অভ্যর্থনা জানাতে বা রিসিভ করতে পারবে না। নিজ নিজ দায়িত্বে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে হবে। এদিকে বিধিনিষেধ থাকলেও সৌদি আরবগামী যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে বিমানবন্দরে। নতুন করে কোন টিকেট বিক্রি করছে না বিমান ও সাউদিয়া। আগে যারা টিকেট কিনে দেশে ফিরেছেন তাদেরই রিইস্যু করা হচ্ছে আপাতত। যদিও টিকেট নিয়ে শনিবারও কাওরানবাজারে দেখা গেছে শত শত প্রবাসীর জটলা। তারা টিকেটে চলমান টোকেন পদ্ধতি বাদ দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকেট ইসূ্যুর দাবি জানিয়ে- নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। অবশ্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, টিকেট নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। সবাইকে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত তিন দিনে দেখা গেছে, সৌদি আরবে যাত্রীদের ফেরার ধুম লেগেছে। সাউদিয়ার নিয়মিত দুটো ফ্লাইটের পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। একইভাবে আজ, কাল ও পরশু রয়েছে বিমান ও স্উাদিয়ার আরও ফ্লাইট। বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। সৌদির পর আলোচনায় আসে সিঙ্গাপুরগামী যাত্রীরা। এদিকে সৌদি আরব থেকে রিটার্ন টিকেট কেটে যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের টিকেট দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নতুন করে কোন টিকেট বিক্রি করছে না এয়ারলাইন্সটি। টিকেট বিতরণের ক্ষেত্রে ফ্লাইট বাতিলের তারিখ ধরে পর্যায়ক্রমে টিকেট রিইস্যু করা হবে। বিমান থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে- তারিখ অনুসারে যাত্রীদের টিকেট রিইস্যু করছে তারা। করোনা তা-বের দরুন গত ১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের আকাশপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ১৬ মার্চ থেকে পরবর্তী সব সিডিউল ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। টিকেট বিতরণের ক্ষেত্রে বিমান ফ্লাইট বাতিলের তারিখ ধরে পর্যাক্রমে বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর টিকেট রিইস্যু করছে। এ সম্পর্কে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকাব্বির হোসেন বলেন-যাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকেট দিতে আমরা ফ্লাইট বাতিলের তারিখ ধরে টিকেট রিইস্যু করব। প্রথমে ১৬ মার্চে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকেট রিইস্যু করা হচ্ছে। পর্যাক্রমে ১৭, ১৮, ১৯, ২০ মার্চ এভাবে তারিখ ধরে ধরে সিরিয়ালি টিকেট রিইস্যু করা হবে। বর্তমানে রিয়াদ ও জেদ্দায় ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছে বিমান। অনুমতি না পাওয়ায় দাম্মাম ও মদিনার রুটের যাত্রীদের এখনই টিকেট রিইস্যু করছে না এয়ারলাইন্সটি। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন-আমরা রিয়াদ ও জেদ্দায় ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছি। তাই এ রুটের যাত্রীদের টিকেট রিইস্যু করা হচ্ছে। দাম্মাম ও মদিনার অনুমোদন পেলে সেই রুটগুলোতেও ফ্লাইট চলবে। নতুন ফ্লাইট অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অন্য যাত্রীদেরও বুকিংয়ের শুরু হবে। সৌদি আরবে ১ অক্টোবর থেকে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতির জন্য আবেদন করেছে বিমান। তবে এখনও অনুমতি পায়নি। মোকাব্বির হোসেন বলেন-আসন বরাদ্দ শুরু করার আগে ল্যান্ডিং পারমিশন আবশ্যক। কিন্তু ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়া যায়নি। ল্যান্ডিং পারমিশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্লাইট ঘোষণা করা হবে। বিমান জানিয়েছে- বাণিজ্যিক ফ্লাইটে অনুমতি না পেলেও বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের অনুমতি পেয়েছে বিমান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্যিক ফ্লাইটের পুরাতন টিকেটের যাত্রীদের চার্টার্ড ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে তারা। গতকাল শনিবার ঢাকা-জেদ্দা ও আজ রবিবার সেপ্টেম্বর ঢাকা-রিয়াদে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এই দুই ফ্লাইটে ১৬ ও ১৭ মার্চের জেদ্দা ও রিয়াদের বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের টিকেট রিইস্যু করা হচ্ছে। তাদের জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে টিকেট ইস্যুর কার্যক্রম শুরু করে বিমান। ২৯ সেপ্টেম্বর বিমান ঢাকা-রিয়াদ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা-জেদ্দা যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ফ্লাইটগুলোতে যেতে পারবেন যাদের ১৮ থেকে ২০ মার্চের জেদ্দা এবং ১৮ ও ১৯ মার্চের রিয়াদের বিমানের ফ্লাইট ছিল। রিটার্ন টিকেটধারী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টিকেট পাবেন। বুকিং করা হচ্ছে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে। এদিকে নানা অনিয়ম ও সিন্ডিকেট দৌরাত্মের দরুন টোকেন পদ্ধতি বাদ দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকেট বিক্রির দাবি জানিয়েছেন আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা। শনিবারও ভোর থেকে তারা কাওরানবাজারের প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থিত সাউদিয়া কার্যালয়ে অবস্থান নেন- যেখানে রয়েছে সাউদিয়ার অফিস। টিকেট নিয়ে সমস্যা হবে না ॥ এদিকে সৌদি যেতে টিকেটের কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। শনিবার দুপুরে তার ফেসবুকে একটি পোস্টে এ কথা উল্লেখ করেন। শাহরিয়ার আলম জানান, টিকেটের কোন সমস্যা হবে না। সবাই যেতে পারবেন সফর মাস শেষ হওয়ার আগেই। সবাই একসঙ্গে টিকেট কাটার চেষ্টা করছেন বলে ভিড় হচ্ছে বা মনে হচ্ছে টিকেটের সঙ্কট-যা সত্য নয়। প্রয়োজনে ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়ানো হবে। অযথা হই-হুল্লোড় বা তাড়াহুড়োর কোন প্রয়োজন নেই। দাম্মামেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আমরা বলেছি এবং তা করা হবে। তারিখ পরে জানিয়ে দেয়া হবে। কেউ বাদ যাবেন না। এ সময় তিনি ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান এবং ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য নিয়ম মেনে আবেদন করার আহ্বান জানান।
×