ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুজনের পরিচালকের দায়িত্ব পালন নিয়ে তোলপাড়

নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার অনিয়মের নেপথ্যে আনাস মাদানী

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার অনিয়মের নেপথ্যে আনাস মাদানী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ফটিকছড়ির শতবর্ষী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত নাজিরহাট নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসায় শূন্যপদে পরিচালক নিয়োগ নিয়ে গেল চার মাস ধরে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় পরিচালক পদে দুজনের দায়িত্ব পালন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা ইদ্রিস গত ২৭ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২৮ মে ভোর পাঁচটায় ব্যাপক প্রচার ছাড়া সংক্ষিপ্ত জানাজা শেষে মাদ্রাসার জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। ওইদিন মাদ্রাসার মজলিশে শূরা কমিটির জরুরী বৈঠক ডেকে হেফাজতের নায়েবে আমীর বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মহিব্বুল্লাহর নেতৃত্বে এ শূন্যপদে অস্থায়ীভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে দায়িত্ব দেন একই মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমীকে। তবে সিদ্ধান্ত ছিল শূরা কমিটির পুনর্বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কাশেমীই মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু বিধিবাম। হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী এতে বাদসাধেন। ওই সময় রহস্যজনকভাবে আতাত করে শূরা কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আল্লামা আহমদ শফীর লিখিত নির্দেশ আছে মর্মে নিয়োগ দেয়া হয় ওই মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক মাওলানা সলিম উল্লাকে। উল্লেখ্য হেফাজতের নায়েবে আমীর ও বাবুনগর মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা মহিব্বুল্লাহর সঙ্গে আনাস মাদানীর আগে থেকে দ্বন্দ্ব থাকায় ওই মাদ্রাসায় পরিচালক নিয়োগ নিয়ে আনাস প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। একদিকে শূরা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুফতি কাশেমীকে অস্থায়ী দায়িত্ব প্রদান, অন্যদিকে আনাস মাদানী তার পিতা আল্লামা আহমদ শফীর নাম ভাঙ্গিয়ে সলিম উল্লাহকে একই পদে স্থায়ী নিয়োগ দেয়ায় এলাকায় হঠাৎ ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। একপর্যায়ে এলাকার বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষের পক্ষে মাওলানা সলিম উল্লাহর নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। যেদিন প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়, সেইদিন আনাস মাদানীর ইন্ধনে মাওলানা সলিম উল্লাহর পক্ষ হয়ে নাজিরহাটে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপরে মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ ইউসুফ আনছারীর নেতৃতে স্থানীয় জনতা মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের ভেতরে সলিম উল্লাহকে অবৈধভাবে পারিচালক পদে নিয়োগের বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মাওলানা সলিম উল্লাহ নিজেই উচ্ছৃঙ্খলতার ভাব দেখিয়ে ইউসুফ আনছারীকে লাঞ্ছিত করেছেন মর্মে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে মাদ্রাসা সংরক্ষণ কমিটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এ অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ইতিমধ্যে, অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত মাওলানা সলিম উল্লাহ আনাস মাদানীর ক্ষমতা দেখিয়ে শূরা কমিটি কর্তৃক অস্থায়ী নিয়োগ দেয়া মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সলিম উল্লাহ এলাকার অসাধু কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে মুফতি কাশেমীর অনুপস্থিতিতে প্রধান দফতরের আসবাবপত্র বের করে দেয়া হয় এবং বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে সলিম উল্লাহর ঔদ্ধত্য আচরণে মুফতি কাশেমী মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যান। এর আগে মুফতি কাশেমী শূরা কমিটির সিদ্ধান্ত বহাল রাখা এবং তার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে মাওলানা সলিম উল্লাহকে বিবাদী করে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেন। এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আন্দোলনে শূরা কমিটি কর্তৃক আনাস মাদানী বহিষ্কার হওয়ার পর সলিম উল্লাহ বেকায়দায় পড়ে যান। সেই কারণে তিনি টিকে থাকার কৌশল খুঁজতে শুরু করেছেন এবং ২১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে তার সমর্থিত প্রায় শ’খানেক লোককে নিয়ে পরামর্শ সভা ও ভূঁরিভোজের আয়োজন করেন।
×