ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় সেনার স্বীকারোক্তি ॥ কাশ্মীরে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন

কাশ্মীরে ক্ষমতার অপব্যবহার

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

কাশ্মীরে ক্ষমতার অপব্যবহার

কাশ্মীরে ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ১৮ জুলাই দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা কাশ্মীরের শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে অজ্ঞাত তিন ‘বিদ্রোহীকে’ হত্যা করেছে। তবে শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নিহত তিন শ্রমিক রাজৌরি জেলার বাসিন্দা ছিলেন বলে শনাক্ত করা গেছে। তাদের ‘সাজানো বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার। খবর আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট ও এপির। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সেনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী আমশিপোরা অভিযানের বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, অভিযানের সময় সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ করা ক্ষমতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, তদন্তে সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, আমশিপোরা অভিযানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা তা এখনও জানা যায়নি এমন তিনজন হলেন- ইমতিয়াজ আহমেদ, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ ইবরার। তারা রাজৌরি থেকে ফিরছিলেন। তাদের ডিএনএ প্রতিবেদন আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোন যোগসূত্র ছিল কিনা সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এর আগে পুলিশ দাবি করেছিল, ওই অভিযানে সেনা সদস্যদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। ঘটনার কিছুদিন পরে নিহত তিন ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখান থেকেই তাদের শনাক্ত করেন স্বজনেরা। তারা এই হত্যাকাণ্ডকে বেআইনী বলে অভিযোগ করেন। শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতির পর নিহত ইবরারের চাচাত ভাই নসিব খাতানা জানান, নিহতরা সবাই একে অপরের চাচাত ভাই ছিলেন। তারা কাজের জন্য রাজৌরি থেকে শোপিয়ান গিয়েছিলেন। নসিব বলেন, আমরা ১৭ জুলাই শোপিয়ান পৌঁছাই এবং ওই রাতেই শেষবারের মতো তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলছিল তখন। তাই আমরা ভেবেছিলাম, তাদের হয়তো কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আমরা তাদের খবরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আমরা তাদের কোন খবর পাইনি। তিনি বলেন, আমরা ছবি দেখার পর স্বজনদের চিহ্নিত করে অভিযোগ করি। তাদের সন্ত্রাসী বলে দাবি করেছিল সেনাবাহিনী। নিরপরাধ মানুষের সঙ্গে তারা আর কত অন্যায় করতে পারে। ভুক্তভোগী আরেক পরিবারের এক সদস্য জানান, স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার ফল পেতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরতে হচ্ছে আমাদের। গত ৩ আগস্ট নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনও ফল মেলেনি। তিনি বলেন, আজ প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে ডেকে নিয়ে তারা স্বীকার করেছে, তিনজনকে সাজানো বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই আমাদের স্বজনদের যারা হত্যা করেছে তাদের প্রকাশ্যে এনে সাজা দেয়া হোক। আমরা তিনজনের মরদেহ চাই। জুলাইয়ের ওই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ইবরার। তিনি পড়াশোনার জন্য দিনমজুরের কাজ করে অর্থ জমাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এদিকে কাশ্মীরে সাংবাদিকদের জন্য খবর সংগ্রহের কাজ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। সেখানে সম্প্রতি সাংবাদিকদের মারধর, হেনস্থা ও গ্রেফতারের ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন। সাংবাদিকদের হেনস্থা আর মারধরের ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। সাংবাদিকরা বলছেন, অনেক সময়ই কেন তাদের মারধর করা হচ্ছে তা বুঝতেও তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। গত বছর ৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে কাশ্মীরে নিরাপত্তাবাহিনীর কড়াকড়ি আরও বেড়েছে। নিয়মিতই সাংবাদিকদের থানায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে, খবরের সূত্র জানতে চাওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন। শ্রীনগরে বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক মজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন, শুধু খবরের সূত্রই নয়, কখনও খবরটা কেন প্রকাশ করা হলো সেটাও যুক্তি দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হয়। জুন মাসে মোদি সরকার সরকার এক নতুন গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরি করেছে, যাতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল ভারত শাসিত কাশ্মীরে সাংবাদিকদের হেনস্থার ঘটনাগুলোর নিন্দা জানিয়েছে। তারা এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে ২০১৯ এর ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তত ১৮ জন সাংবাদিকের ওপরে শারীরিক হামলা, হেনস্থা বা হুমকির ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে তারা।
×