ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারকদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ

আর কোন বেসরকারী প্রাথমিক স্কুল সরকারী হচ্ছে না

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

আর কোন বেসরকারী প্রাথমিক স্কুল সরকারী হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আরও নতুন নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী হবে-মাঠ পর্যায়ে এমন নানা খবর চাউর হলেও একে বিভ্রান্তিকর প্রচার বলে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণের কোন প্রস্তাব বিবেচনার সুযোগ নেই। এদিকে শিশুদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করার উদ্যোগ করোনার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর থেকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবেনা বলেই আভাস দিয়েছেন মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সরকারীকরণের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক শ্রেণীর প্রতারক নতুন নতুন বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করা হবে বলে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে নিরীহ শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। এমন অনেক তথ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার জন্যই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আর কোন প্রাইমারী স্কুল সরকারীকরণের কোন সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে না পাঠাতে সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২৬ হাজার ৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তিন ধাপে জাতীয়করণ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের এক লাখ চার হাজার জন শিক্ষককে আত্তীকরণ করা হয়। সার্বজনীন ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রয়োজন হলে সরকার নিজ উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনসহ শিক্ষক নিয়োগ করবে। বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের আর কোন প্রস্তাব এ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কোন কোন স্বার্থান্বেষী মহল বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে মর্মে প্রচার চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহ করছে, যা অনভিপ্রেত। বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় প্রিন্ট, অনলাইন, ফেসবুক টিভি ও ফেসবুক পেজে প্রচার চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ আদায় করছে কতিপয় ব্যক্তি। যে কোন ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারে প্ররোচিত না হতে এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের কোন আবেদন, সুপারিশ, প্রতিবেদন এ মন্ত্রণালয়ে না পাঠাতে বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে অনুরোধ করেছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে শিশুদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করার উদ্যোগ করোনার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনার ছোবলে শিক্ষা ব্যবস্থায় সঙ্কটের কারণে আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে শিশুদের নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই প্রস্তুত করা সম্ভব না হওয়ায় এ কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে আগামীবছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা চলছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ বলেছেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা তুলে দিয়ে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এজন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইলটিং হিসেবে ১০০টি বিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি চালু করা হয়। তবে আগামী বছর থেকে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়তো হবেনা। তিনি বলেন, আগামী বছর দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা সম্ভব না হলেও বেছে বেছে বিভিন্ন জেলার এক হাজার স্কুলে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে। ২০২২ সাল থেকে দেশের সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন এ পদ্ধতি চালু করা হবে। শিশুদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর সব পরীক্ষা তুলে দিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা গিয়েছিলেন। অতিরিক্ত চাপে লেখাপড়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে যেন ভীতি তৈরি না হয় সেজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজর দিতে চলতি বছর ১৩ মার্চ এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই আগামী বছর থেকে শিশুদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করার উদ্যোগের ঘোষণা দিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রণালয় বলেছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক এবং বার্ষিক পরীক্ষা তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত থাকবে না। সারা বছরেই ক্লাসে মূল্যায়ন করা হবে। শুধু পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীর আচার-আচরণ সবগুলো বিষয় মূল্যায়ন করে গ্রেড দেয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল- হোসেন বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর থেকে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে বর্তমান সঙ্কটের কারণে আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না-ও হতে পারে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই তৈরির কথা থাকলেও এনসিটিবি সেসব বই তৈরি করতে পারছে না। শিক্ষকদের আত্তীকরণের চিঠি বাতিল একদিনেই বাতিল ॥ সরকারীকৃত স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাগজপত্র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সত্যায়ন করে শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রবিবারের সেই চিঠি বাতিল করে সোমবার নতুন চিঠি জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। নতুন চিঠিতে শুধু প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আঞ্চলিক উপপরিচালক বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সত্যায়ন করে সরকারীকৃত স্কুলগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাগজ অধিদফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে। অধিদফতর থেকে এসব তথ্য জানিয়ে সব সরকারীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠি পাঠানো হয়েছে।
×