ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উস্কানি সহ্য করা হবে না ॥ ভারত

লাদাখে চীনা জঙ্গীবিমান

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

লাদাখে চীনা জঙ্গীবিমান

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হিমালয়ের পাদদেশের লাদাখ সীমান্ত। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ওই এলাকায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন জঙ্গীবিমান মোতায়েন করেছে বেজিং। এর প্রতি উত্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে নয়াদিল্লী। ২৯ ও ৩০ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে লাল ফৌজ। এ চীনা পদক্ষেপ প্রতিহত করে ভারত। জে-২০ যুদ্ধবিমান হোতান বিমান ঘাঁটিতে প্রস্তুত রেখেছে চীন। মঙ্গলবার যুদ্ধবিমানকে লাদাখ ও তার আশপাশের এলাকাতেও উড়তে দেখা গেছে। ভারতের হাতে পাঁচটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান আসার পর সেগুলো চালনা শুরু করতেই চীন তাদের সবচেয়ে আধুনিক ও সর্বাধিক সক্ষম যুদ্ধবিমানকে পুনরায় লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন করল। খবর আলজাজিরা, এপি ও বিবিসি অনলাইনের। এর আগেও এই বিমানঘাঁটিগুলোতে জে-২০ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছিল চীনা বাহিনী। কিন্তু কিছুদিন পর সেগুলো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এবার ফের মোতায়েন করা হলো জে-২০। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্যাংগং লেকে সুযোগ বুঝে এগিয়ে এসেছিল চীনা সেনা। জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। কোনভাবেই চীনা সেনার দখলদারি মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ভারত। তবে ইন্দো-চীন চলমান উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের সেনা স্তরে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি জিয়াং। তিনি বলেন, লাদাখে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে দায়বদ্ধ চীনা সেনা। তাই কোন অনুপ্রবেশের ঘটনা চীনা সেনার পক্ষ থেকে ঘটেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে সোমবার জানানো হয়, পূর্ব লাদাখের সীমান্ত বিবাদ ঘিরে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরের আলোচনায় দু’দেশ যে ঐক্যমতে পৌঁছেছিল তা গত শনিবার ও রবিবারের মধ্যবর্তী রাতে লঙ্ঘন করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। সীমান্তের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চীনের সেনা ‘প্ররোচনামূলক সামরিক গতিবিধি’ চালিয়েছে। ভারতীয় সেনাদের তৎপরতা এবং সতর্কতায় চীনের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্যাংগং সো লেকের দক্ষিণ তীরে চীনের সেনার গতিবিধি আগেই রুখে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী এবং সীমান্তে একতরফাভাবে তথ্য পরিবর্তনের যে উদ্দেশ্য ছিল চীনের, তা আটকে দিয়েছে। চীনের এই পদক্ষেপ ভারত ভালভাবে নেবে না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারতীয় সেনা। কিন্তু নিজেদের আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষা করার ক্ষেত্রেও (সেনা) সমানভাবে বদ্ধপরিকর। তাই এবারও পরিস্থিতি সমাধানে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে ভারত। সমস্যা সমাধানের জন্য আপাতত দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক চলছে। চলতি বছরে এপ্রিল-মে মাসে লাদাখে প্রথম সংঘর্ষে জড়ায় ভারত ও চীন। গত ১৫ জুন পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। চীনের বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘিরে গালওয়ান উপত্যকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হন। তবে চীনের হতাহতের তথ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা কর্নেল আমন আনন্দ বলেন, ‘সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ব লাদাখে সংঘাত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে যে ঐক্যমত হয়েছিল, ২৯-৩০ আগস্ট রাতে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তা লঙ্ঘন করেছে। স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে সেখানে প্ররোচনামূলক সামরিক পদক্ষেপ করেছে তারা।’ তবে চীনের পক্ষে কী ধরনের সামরিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা খোলাসা করেননি কর্নেল আমন আনন্দ। তিনি বলেন, ‘প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে চীনা বাহিনীর এই ঢোকার চেষ্টা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় বাহিনী। সেখানে নিজেদের অবস্থান মজবুত করা হয়েছে। একতরফাভাবে চীন পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। লাদাখ সীমান্তে নতুন করে এই উত্তেজনার পর দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্নেল আনন্দ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক অখ-তা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারতীয় সেনা।’
×