ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহন আগের ভাড়ায়

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০

গণপরিবহন আগের ভাড়ায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণপরিবহন আগের ভাড়ায় ফেরায় যাত্রী ও মালিকপক্ষের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। প্রথম দিন রাজধানীতে মোটামুটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। তবে কিছু রুটে বিশৃঙ্খলা ও বাগবিত-ার মতো বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় যাত্রীদের তোপের মুখে পড়তে দেখা গেছে কয়েকটি বাসে। এ ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি গণপরিবহনও কম দেখা গেছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন চালক ও হেলপারদের বাগবিতণ্ডা হতেও দেখা গেছে। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, করোনাাকালেও অনেকে নিয়ম মেনে চলেছে। কিন্তু কিছু কিছু পরিবহন, যারা সরকারী নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাসেই পুরনো ভাড়া আদায় করা হয়। বাসগুলোতে আসন ভিত্তিক যাত্রী তোলা হয়। কোথাও দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা যায়নি। সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত অফিস সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিলগামী বাসে খুব চাপ দেখা দিলেও চালক ও হেলপাররা তার প্রতি কড়া নজরদারি করেছে। বিমানবন্দর গোলচত্বরে বলাকা গাজীপুর থেকে সায়েদাবাদগামী একটি বাসে কজন যাত্রী জোরপূর্বক ওঠে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও হেলপার তা মানেনি। তাদের অনেকটা জোরপূর্বকই নামিয়ে দেয়া হয়। বেলা দশটার পরও অবশ্য পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে থাকে। অর্থাৎ বাসগুলোতে ছিল আসন ভিত্তিক যাত্রী। আসনের অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রয়োজন হয়নি চালকের। বলাকার কনডাক্টর মাসুম বলেন, এখন করোনার জন্য এমনিতেই বাসে মানুষ ওঠতে চায় না। সিট ফাঁকাই থাকে। অবশ্য সকালে কিছুটা বেশি ছিল। যাত্রীর পেলে তো দাঁড়িয়ে নেয়ার প্রশ্ন উঠত না। প্রতিটি সিটেই যাত্রী বসানো হচ্ছে। ভাড়াও আগের মতোই নেয়ায় যাত্রীরাও খুশি। মালিক শ্রমিকরাও খুশি। যদি আাগের মতো যাত্রীর চাপ দেখা দেয় তখন হয়তো অনেকের পক্ষেই দাঁড়িয়ে না নেয়ার আদেশ মানা খুব কঠিন হয়ে যাবে। বিকেল চারটায় মহাখালী টার্মিনালের অপেক্ষায় থাকা দুটো বাসের যাত্রীদের অভিযোগ-আগের ভাড়ার কথা মনে করিয়ে না দিলে নিজ ইচ্ছায় আগের ভাড়া নিচ্ছে না পরিবহনগুলো। এ নিয়ে কয়েকটি বাসে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়লেও পরিবহনের সংখ্যা কমেছে। সকালের দিকে কিছুটা বেশি থাকলেও দুপুরের দিকে অনেক কম দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে একটি পরিবহনে আসনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহন হতো। এখন সেখানে তার শতভাগ আসন ভর্তি করে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। আগের ভাড়ায় ফিরলেও যাত্রী সংখ্যা বাড়েনি। সে কারণে বাসের সংখ্যা কম। বাস ও যাত্রীর আনুপাতিক হার মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় প্রথম দিন বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বরং ভাড়া কমায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তারা। মগবাজার এলকায় দেখা গেছে- বাস আসছে কম। তবে প্রতিটি আসনেই যাত্রী বসিয়ে বাস চালানো হচ্ছে। কোথাও পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও। প্রতিটি পরিবহনেই সবকটি আসনে যাত্রী রয়েছে। এ সময় গুলিস্তান এয়ারপোর্ট পরিবহনের একজন যাত্রী জানান, আগের ভাড়ার কথা কন্ডাক্টরদের মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে। তা না হলে তারা করোনাকালের জন্য যে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়, সেই ভাড়াই রেখে দিচ্ছে। আমার থেকেও এমন করা হয়েছে। এভাবেই হয়তো পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। বিকেলে পল্টনে দাঁড়িয়ে কথা হয় শিখর পরিবহনের যাত্রী মইনের সঙ্গে। তিনি মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সেখানে এসেছেন। করোনা তা-বের আগের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এই পথের ভাড়া হচ্ছে ১৮ টাকা, করোনাকালীন সময়ে এখান থেকে ৩৫ টাকার মতো আদায় করা হতো। কিন্তু মঙ্গলবার তার থেকে ২০ টাকা আদায় করা হয়। এ নিয়েই তার ক্ষোভ। এ সময় বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মনির বলেন, আমরা আগের ভাড়াই আদায় করছি। কিন্তু কিছু কিছু যাত্রী সেই ভাড়াও দিতে চায় না। যে কারণে কারও কারও সঙ্গে ঝামেলা হয়। এছাড়া সিটের বাইরে কোন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। তারা জরিমানা করে দিচ্ছে।
×