ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড

নেপথ্যের নায়কদের খুঁজতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব ১৪ দলের

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২০ আগস্ট ২০২০

নেপথ্যের নায়কদের খুঁজতে কমিশন গঠনের প্রস্তাব ১৪ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোটের আলোচনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকসহ নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি উঠলে সবাই একমত পোষণ করে প্রস্তাবটি দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরার দাবি জানানো হয়। তাঁরা বলেন, যদি পরিকল্পনাকারীদের সঠিকভাবে ধরা না হয় তাহলে ষড়যন্ত্র চলছে, চলতেই থাকবে। যদি মূল ষড়যন্ত্রকারীদের ধরা হয় ষড়যন্ত্র চিরতরে ধ্বংস হবে। বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৪ দলের ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব দাবি উত্থাপন করেন জোটের শীর্ষ নেতারা। জবাবে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু প্রস্তাবটি গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মত দেন। সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, এই সভা থেকে অনেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে তদন্ত করা হোক- যারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল, কারা নেপথ্যে নায়ক ছিলেন। যারা নেপথ্যের নায়ক হিসেবে হত্যাকা- পরিচালনা করেছেন এজন্য একটা তদন্ত কমিশন গঠন হওয়া উচিত। আমিও ১৪ দলের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি এবং এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এই দেশকে একটি নব্য পাকিস্তান করার ষড়যন্ত্র নিয়েই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা- ঘটানো হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকা-। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল পাস করেছিল। হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সাজাপ্রাপ্তসহ সব যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দিয়ে শাহ আজিজের মতো লোককে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। জিয়াউর রহমান এই দেশে পরাজিত শক্তিদের জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন তুলে ধরে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, আমাদের স্বাধীনতার চেতনা মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী কয়েকজন খুনীর জবানবন্দীতে এটা পরিষ্কার যে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। পাকিস্তানীরা পারেনি, কিন্তু খন্দকার মোশতাক ও জিয়ারা দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তাই সময় এসেছে একটা কমিশন গঠন করে তদন্ত করা। কারা এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা বিদেশী তারা কারা? তদন্ত করলেই প্রকৃত কুশীলবরা মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচিত হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকা- কোন ব্যক্তির হত্যা ছিল না, এটা ছিল রাজনীতিকে হত্যা, বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে সরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতার ঘোষণা সামাজিক ন্যায় বিচারের থেকে সরিয়ে নেয়ার হত্যাকা-। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধানকে খ--বিখ- করেছে। সময় এসেছে একটি কমিশন গঠন করে নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করার। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকা-। শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকা- নয় অথবা শুধু ক্ষমতার রদবদলের হত্যাকা- নয়- এটা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকা-। এই হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এবং সংবিধানের আত্মাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে পাকিস্তান পন্থার পথে, সাম্প্রদায়িকতার পথে, অপরাজনীতির পথে বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়ার একটা চেষ্টা খুনী মোশতাক এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান গং করেছিলেন। বিএনপি বা যে কোন মহল যে যুক্তিই দেখাক না কেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে খন্দকার মোশতাক ও জেনারেল জিয়া পরস্পর জড়িত। এই দায় তারা এড়াতে পারে না। তাই জাতিকে সঠিক ইতিহাস চর্চা করার জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যে নায়কদের স্বরূপ উন্মোচন করার জন্য ১৪ দলের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী জাতীয় কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছি। কমিশন গঠন করে তদন্ত করা হোক, তাহলেই নেপথ্যে নায়করা বেরিয়ে আসবে। আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে বহুদিন রাজপথে দাবি করে আসছি কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হয়েছে। অনেকে পালিয়ে বিদেশে রয়েছে। খুনী যারা তাদের রায় হয়েছে, কিন্তু তাদের মূল পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী তারা কিন্তু আড়ালে রয়েছে। বারবার দেশের মানুষ জানতে চায় মূল পরিকল্পনাকারী কারা? যদি পরিকল্পনাকারীদের সঠিকভাবে ধরা না হয় তাহলে ষড়যন্ত্র চলছে, চলতেই থাকবে। যদি মূল ষড়যন্ত্রকারীদের ধরা হয় ষড়যন্ত্র চিরতরে ধ্বংস হবে। এজন্য কমিশন গঠন করে খুনী জিয়াসহ কুশীলবদের বের করে আনতে হবে। তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। নীলনক্সার মাধ্যমে দেশকে হত্যা করার জন্য আমাদের স্বাধীনতা হত্যা করার লক্ষ্যে হত্যাকা- হয়েছিল। এই হত্যাকা-ের কুশীলব জিয়া-মোশতাকসহ যারা কুশীলব ছিল তাদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন। একটি কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করার প্রস্তাব করছি। জীবিত কুশীলবদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পরিপূর্ণতা পাবে। পরবর্তী প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি।
×