ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোরশেদ আলম সুজন চসিকের প্রশাসক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৫ আগস্ট ২০২০

খোরশেদ আলম সুজন চসিকের প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নানা জল্পনাকল্পনার পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে অবশেষে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে আজ বুধবার (৫ আগস্ট) থেকে চসিকের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ক্ষমতার মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে। এ কর্পোরেশনের নির্বাচন গত ২৯ মার্চ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাজনিত পরিস্থিতির কারণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। ফলে সরকার এ কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়োগ প্রদান করেছে। তিনি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আগামী ১৮০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে প্রয়োজনে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চসিকের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি উঠে আসলে আমলা না রাজনৈতিক ব্যক্তি এ পদে আসছেন তা নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চাউর হয়। শেষ পর্যন্ত সরকার রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্বকেই নিয়োগ দিয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিতে হবে। সঙ্গে বিলুপ্ত হবে বিদায়ী মেয়রের নেতৃত্বাধীন গোটা পরিষদ। অর্থাৎ ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদেরও বিদায় নিতে হবে। এ অবস্থায় নতুন প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিষদ গঠন হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। এ পরিষদে বর্তমান কাউন্সিলরদের রাখা হবে কিনা তা নিয়ে কোন তথ্য প্রদান করা হয়নি। এছাড়া প্রশাসকের নেতৃত্বে নতুন পরিষদে কারা অন্তর্ভুক্ত হবেন সে ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। এদিকে মঙ্গলবার বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন নতুন অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট অধিবেশনে তিনি তার মেয়াদকালে সফলতার নানা চিত্র তুলে ধরেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খোরশেদ আলম সুজন ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন। বর্তমানে স্থগিত হয়ে যাওয়া চসিক নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম. রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলের মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। নতুন মনোনীত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমানে মহসিন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং পরবর্তীতে জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী যখন জালালাবাদ পাহাড় আক্রমণ করে তখন আহত বাঙালী সৈনিকদের সেবাদানে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। বিহারীরা তাকে দুবার হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চেয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন তিনি। ৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯১ সালে তিনি শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটির সদস্য নিয়োজিত হয়েছিলেন। ’৯৬ সালে বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সুজন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের এমপি এবং পরবর্তীতে সিটি মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছিলেন। কিন্তু বঞ্চিত হন। এ অবস্থায় চসিকের প্রশাসক পদে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিষয়টি উঠে আসলে সরকারী নীতি নির্ধারক মহল খোরশেদ আলম সুজনকে বেছে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। সরকারী ঘোষণার পর খোরশেদ আলম সুজন তার প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৫০ বছর ধরে রাজনীতির মাঠে আছি। দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার মর্যাদা রক্ষায় তিনি সচেষ্ট থাকবেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তার দুটি প্রধান কাজের বিষয়ে জানান দিয়েছেন। একটি হচ্ছে মহানগরীর বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট জরুরী ভিত্তিতে মেরামত ও নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তৎপর হওয়া। উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট আ জ ম নাছির উদ্দিন চসিকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ পাঁচবছর। সে হিসেবে আজ মেয়র নাছির ও তার নেতৃত্বাধীন পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিধান অনুযায়ী মেয়াদ পূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ২৯ মার্চ ভোটের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত ভোটের দিনের একসপ্তাহ আগে অর্থাৎ ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
×