ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন

মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৩১ জুলাই ২০২০

মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা

ফিরোজ মান্না ॥ মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। গত বছর মানব পাচারের চালচিত্র নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত চার প্রতিষ্ঠানের এক সম্মিলিত রিপোর্টে বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই পাচারের প্রবণতা কমানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্ব শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউনিসেফ, ইউএনওডিসি ও টিআইপি সম্মিলিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মানব পাচার রোধে সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরকে আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেন, সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে মানব পাচার রোধ করা সম্ভব। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি মানুষ আধুনিক দাসত্ব কিংবা পাচারের শিকার হচ্ছেন। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নারী, যাদের বেশিরভাগই যৌন শোষণের শিকার হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ পুরুষ। ভাল বেতনের চাকরির লোভে ফেলে পাচার করছে দালাল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, আগের তুলনায় ২০১৯ সালে মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদর্শিত প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। এসব প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছেÑ অধিকসংখ্যক পাচারকারীকে দ- প্রদান, অধিকসংখ্যক শিকার ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণ, ২০০০ সালের জাতিসংঘ টিআইপি প্রটোকল অনুসরণ করা, বাংলাদেশের পাচার বিরোধী আইনে নির্ধারিত সাতটি পাচারবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। জাতিসংঘের মতে, বাংলাদেশ পাচারের শিকার অনেক মানুষের উৎপত্তি ও গন্তব্যস্থল চিহ্নিত করতে পেরেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ পাচারের শিকার হন। কোভিড-১৯ ভাইরাস পাচার পরিস্থিতির ওপর সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে গত কয়েক মাসে মানব পাচারের ঘটনা অনেকটাই কমেছে। টিআইপির প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বাংলাদেশের জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিবান্ধব বিচার ব্যবস্থা গঠনের আহ্বান জানানো হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত পাচারবিরোধী ট্রাইবুন্যালসমূহ সক্রিয়করণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমান্ত রক্ষাবাহিনী, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ, সমাজকল্যাণ সেবাসমূহ এবং বিচার ব্যবস্থার দক্ষতা ও সমন্বয় বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। জনগোষ্ঠীর আরও অধিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিতে বিডিইউএনএনএম বেসরকারী সংস্থাসমূহ এবং পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কাজ করা সংগঠনদের মিলিত উদ্যোগে পাচারবিরোধী কমিটি সক্রিয়করণের আহ্বান জানিয়েছে। মানব পাচার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাচারের শিকার সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু। সরকারের নারী ও শিশু পাচার, প্রতিরোধ, দমন ও শাস্তি নিশ্চিতে পালেরমো প্রটোকলের ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। বিশ্ব মানাব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মানব পাচারের মতো অপরাধ মোকাবেলায় একটি অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিকে সম্মিলিতভাবে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারী খাতের অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মাইগ্রেশন নেটওয়ার্ক (বিডিইউএনএনএম)। মানব পাচার বিরোধী কারিগরি কার্যকরী দলের (কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পারসন্স টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ) সদস্যরা প্রতিটি দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরকে পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো মানব পাচার নিয়ে বলেন, এই বছর, এই দিনে, আমি জাতিসংঘের বিশ্বব্যাপী মানব পাচার বিরোধী ক্যাম্পেনের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি। যেখানে প্রথম সাড়া প্রদানকারীদের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে। এই ব্যতিক্রম সময়ে, আমাদের অবশ্যই মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রথম সাড়া প্রদানকারীদের প্রশংসা করতে হবে। যারা পাচারের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিতকরণ, সহায়তা প্রদান, মানসিক সেবা প্রদান এবং তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে। একই সঙ্গে পাচারকারীদের অব্যাহতিকেও চ্যালেঞ্জ করছেন। কোভিড-১৯’র এই সঙ্কটকালীন, প্রথম সাড়া প্রদানকারীদের অপরিহার্য ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেননা এই মহামারীর সময়ে পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দিক প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মানব পাচার রোধে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এই ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক অভিবাসীর পাচার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে যা পরবর্তীতে টিআইপি কেসে পরিণত হয়েছে। পাচারবিরোধী সাড়া প্রদানে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তবে, বাংলাদেশ সরকার আনন্দিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের টিআইপি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। এই বিষয়ে এবং টিআইপি প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহকে কার্যকর করতে আমরা মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ অনুসরণ করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাচারকারীদের প্রতিরোধ ও তাদের বিচার নিশ্চিতে এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করা হয়েছে।
×