ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬৫১ বিদ্যালয়

বন্যায় দু’হাজার ১৫১ প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২৯ জুলাই ২০২০

বন্যায় দু’হাজার ১৫১ প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত

বিভাষ বাড়ৈ ॥ করোনা ভাইরাসের ছোবলের মধ্যেই বন্যার কবলে পড়েছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন। প্রতিদিনই নতুন করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন পর্যন্ত দেশের ২৫ জেলায় বন্যায় দুই হাজার ১৫১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬৫১টি বিদ্যালয়। এদিকে বন্যাকবলিত হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা ও ক্ষতি নিরূপণের কাজ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বন্যায় ক্ষতির বিবরণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো সর্বশেষ তথ্যে সমন্বয় করছেন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত কম বেশি কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিদিন আমরা খোঁজ রাখছি। আমাদের কর্মকর্তারা তথ্য পাঠাচ্ছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত দেশের ২৫ জেলায় বন্যায় দুই হাজার ১৫১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বন্যা শেষ হলে অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রতিষ্ঠান মেরামত করব। তবে এবার ভিন্ন চিন্তা আমাদের। যাতে বন্যা হলেই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অকার্যকর হয়ে না যায়। যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসে সেসব চিন্তা মাথায় রেখে ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনে ফ্লোর পাকা করা হলেও পিলার আমরা স্টিলের দেব। যাতে ভবিষ্যতে বন্যা হওয়ার আগেই ওপরের অংশ আমরা খুলে অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারি। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে বন্যাকবলিত দুই হাজার ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, খেলার মাঠ, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে। বন্যা শেষ হলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সারাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা থেকে দেখা গেছে, বন্যায় সারাদেশে দুই হাজার ১৫১ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ৮৬, কুড়িগ্রামে ৭৯, গাইবান্ধায় ৬২, নীলফামারীতে ৫৮, রংপুরে ৫২, বগুড়ায় ৫৫, জামালপুরে ১২৩, সিরাজগঞ্জে ৪৯, টাঙ্গাইলে ৪৫, মানিকগঞ্জে ৩১, ফরিদপুরে ৪৭, নেত্রকোনায় ৭৯, ফেনীতে ৪৯, মাদারীপুরে ৭২, রাজবাড়ীতে ৪৮, শরীয়তপুরে ৪১, ঢাকায় ৫৫, নওগাঁয় ৬৬, সিলেটে ৭২, সুনামগঞ্জে ৪১, পাবনায় ৩২, কিশোরগঞ্জে ৪৭, ফেনীতে ৫৮ ও কক্সবাজারে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু জেলা-উপজেলায় কম বেশি প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা শেষ হলে সকল জেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পর চূড়ান্তভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে। মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ জানান, বন্যায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা নির্ণয় করতে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। ক্ষতির বিষয়ে এক কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় চর এলাকা ও উত্তরবঙ্গের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবচয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি। প্রতিদিন মাঠ পর্যায় থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এদিকে ইতোমধ্যেই বন্যা প্লাবিত অঞ্চলে সকল স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। অধিদফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যাদুর্গত এলাকার সকল স্কুল ও কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে জরুরী ভিত্তিতে খুলে দিতে হবে। অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসাররা ইমেলে (ফংযবভষড়ড়ফ২০১৯@মসধরষ.পড়স) অধিদফতরে পাঠাবেন এবং আঞ্চলিক পরিচালক ও পরিচালকের নিকট অনুলিপি দেবেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বন্যাদুর্গত এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন সকল পর্যায়ের দফতর ও সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবেন। বন্যায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিষ্ঠানের ধরন, ক্ষতির ধরন এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারিত ছকে উল্লেখ করে ইমেলে (ফংযবভষড়ড়ফ২০১৯@মসধরষ.পড়স) অধিদফতরে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জেলা কর্মকর্তাদের। এদিকে সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো যৌথভাবে দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদন তৈরি সময়য়ের চিত্র গত কদিনে পাল্টে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে বহুগুণ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এক হাজার ৯০২টি বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮১ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। বই, খাতা, কলম, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণ ভেসে গেছে ১০ লাখ শিক্ষার্থীর। ওই তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগে, ৭৬২টি। এরপর সিলেট বিভাগে ৬৩৫টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×