ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফখরুল হাসান

গায়ের ছবি মায়ের ছবি

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৫ জুলাই ২০২০

গায়ের ছবি মায়ের ছবি

দীর্ঘদিন থেকে ঘরবন্দী সোহান, টিভি দেখা গেমস খেলা ছাড়া আর কিছু করার নেই। পুরো দেশ এখন লকডাউন। মাঝে মধ্যে বারান্দায় যায়, বাবা-মার চোখ ফাঁকি দিয়ে। সেখানে আছে কয়েকজোড়া কবুতর আর পাখি। কাঁটাবন থেকে কিনে এনেছে ওদের। খুব বেশি মন খারাপ হলে একুরিয়ামের কাছে এসে মাছদের সাঁতার কাটা দেখে। সোহানের মনে হয় সেও পাখি, কবুতর আর মাছের মতো বন্দী। ঘরবন্দী সময়ে তার চোখে ভেসে ওঠে গ্রামের ঝোপ-জঙ্গলের চমৎকার প্রকৃতি। মনে মনে সেগুলোর ছবি অঁাঁকে। গ্রামে যাওয়ার জন্য আকুলি-বিকুলি করে মন। গ্রামের কোন কোন দৃশ্যমান বস্তুর অন্তরালে এক বিশেষ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। ফুটবলের মাঠে নানা বয়সী ছেলেদের হল্লায় ভরে থাকতো। এখন সেখানে বড় বড় ঘাস গজিয়েছে মনে হয়। এখন প্রকৃতি তার স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে। নিজের রুমে গিয়ে ঘুড়িগুলো দেখে। অনেক যত্নে অনেক আদরে রেখে দিয়েছে। তার বাক্সের ডালা খুলে ঘুড়িগুলো দেখলে মনে হয় গ্রাম ও প্রকৃতির সুবাস ফিরে আসে। ছটফট করে ওঠে হাত দুটো। আবারও ইচ্ছে করে নদীর ধার ধরে ছুটতে, শূন্যে ছুড়ে দিতে উড়ন্ত ঘুড়ির সাতরঙা রংধনু। ঘুড়িটা উড়বে, ডানা মেলবে। সুজন কাকা খালি ঘুড়ি বানায়, আর নদীর ধারে বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে ভোঁ-কাট্টা খেলে। ঘুড়িগুলো সুজন কাকা তাকে দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকায় ঘুড়ি কোথায় ওড়াবে ভোঁ-কাট্টা কোথায় করবে। তাই কখন ঘুড়ি ওড়াবে আর গ্রামে যাবে সে চিন্তায় অস্থির সোহান। ছেলের মন খারাপ দেখতে বাবা-মায়েরও ভাল লাগছে না। ছেলের মতো তাঁদের ও ইচ্ছে করছে শহরের দূষিত বাতাস, কোলাহল, ভয় ছেড়ে গ্রামে গিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে। সিদ্ধান্ত মতে তারা গ্রামের যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। কিন্তু...। কিন্তু যাওয়ার আগে পাখি আর কবুতরের প্রতি খুব মায়া হলো। ছেলেকে হঠাৎ চিন্তিত দেখে মা বলে কি হলো বাবা এখনও তোমার মন খারাপ কেন? আমরা এই কয়েক মাস বন্দী থেকে হাফিয়ে যাচ্ছি মা, অথচ কবুতর, পাখি আর মাছের কথা একবার ভাব। কত কষ্ট হচ্ছে তাদের খাঁচায় বন্দী থেকে? বাবা চোখের চশমাটা খুলে বলে তাই তো আমাদের ঘরে থাকতে কত কষ্ট আর এরা তো অবুঝ ভাব প্রকাশ করতে পারে না। ঠিক বলেছ বাবা চল ওদের স্বাধীন করে দেই। বাবা ছেলে দুজনে মিলে পাখি আর কবুতরগুলোকে তারা আকাশে ছেড়ে দিল। একুরিয়ামের মাছ নিয়ে বুড়িগঙ্গায় ছেড়ে দিল। তারপর তারা চলে এলো গ্রামে। গ্রামের সুন্দর প্রুকৃতি বড় বর বৃক্ষ তাদের হাত ছানি দিয়ে ডাকে। গাড়ি থেকে নেমেই সোহান ছুটে যায় সুজন কাকার কাছে। কিন্তু ঘরে গিয়ে দাদুর কাছে জানতে পারে সুজন বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে বিলে গেছে। সুহান চিনে বিল। বকুল গাছ থেকে সামনে একটু পা বাড়ালেই কাটিয়াল বিল। আগে এই বিল ছিল আরও বড়। সারা বছরই কাটিয়াল বিল পানিতে থৈথৈ করত। নৌকা চালিয়ে মাছ ধরত। ছেলেরা হৈহল্লা করে নৌকা চালাত। কিন্তু এখন কাটিয়াল বিল সেই আগের মতো নেই। চারপাশে রাস্তা। সুজন মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ছিপ ঠিক করে। আর চার বানানোর সব পোঁটলা-পুঁটলি খুলে। ধানের কুঁড়ো, বাসি ভাত, হিং পাতা, চিটাগুড়- এসব মিশিয়ে সুজন ঝটপট চার বানায়। পানিতে ছিপ ফেলার আগে সুজন এদিক-ওদিক তাকাল। দেখে অনেকগুলো শ্যাওলার মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা। এখানেই ছিপ ফেলতে হবে। প্রথমে সে পছন্দের জায়গায় চার ফেলল। তারপর ফেলল ছিপ। ছিপ ফেলতে না ফেলতেই বড়শিতে ধরা পড়লো রুই মাছ। বড়শি থেকে মাছটি খুলতে খুলতে তাকিয়ে দেখে সোহান! সোহানকে দেখেই সুজন বুকে জড়িয়ে ধরে। সোহানের সেকি আনন্দ। মাছ ধরা শেষ হলে দু’জনে মুক্ত বাতাস গায়ে লাগিয়ে ঘরের উদ্দেশে রওনা দিল। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×