স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে বাঘারপাড়ার খবির-উর-রহমান কলেজ। ইতোমধ্যে দু’পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তাতে আসামি হয়েছেন অধ্যক্ষ এবং সভাপতি। সর্বশেষ, গত শনিবার অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করার উদ্দেশে গবর্নিংবডির সভা ডাকেন সভাপতি। বিষয়টি প্রশাসন জানতে পারায় উদ্দেশ্য সফল হয়নি সভাপতি পক্ষের লোকজনের। যদিও সভাপতির দাবি, সভায় অধ্যক্ষকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এলাকার লোকজন বলছেন, অধ্যক্ষ আর সভাপতির টানাপড়েনে কলেজটি ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে নানা বিষয় নিয়ে খবির-উর-রহমান কলেজের অধ্যক্ষ শামছুর রহমান ও সভাপতি নূরমোহাম্মদ পাটোয়ারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে গেছে যে, ইতোমধ্যে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন কলেজের নাইটগার্ড শেখ রিপনের পিতা শেখ আবু বক্কর। সেই মামলায় সভাপতি নূরমোহাম্মদ পাটোয়ারীসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ব্যাপারে নাইটগার্ড শেখ রিপন বলেন, সভাপতি বিধিবহির্ভূত মিটিং করার জন্যে কলেজের অফিস কক্ষ খুলে দিতে বলেন। তিনি তার কথা মতো অফিস খুলে না দেয়ায় তাকে হাতুড়িপেটাসহ বেধড়ক মারপিট করা হয়। তাকে ঠেকাতে তার বৃদ্ধ পিতা এগিয়ে এলে তাকেও মারপিটসহ উলঙ্গ করে কলেজ মাঠে ঘোরানো হয়। এই ঘটনাকে পুঁজি করে কলেজ সভাপতির আত্মীয় নাজিম আল কিরা বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে অধ্যক্ষ শামছুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অধ্যক্ষের পরিচয় গোপন করে তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদী। মামলার পর অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন সভাপতি নূরমোহাম্মদ পাটোয়ারীসহ তার পক্ষের লোকজন। সেই অনুযায়ী গত শনিবার তিনি তার পক্ষের লোকজন নিয়ে গবর্নিংবডির সভায় বসেন। ওই সভায় আগে থেকে রেজুলেশন লিখে আনা হয়। কলেজ বাদ দিয়ে পাশের হাইস্কুলে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত কয়েকজনকে দিয়ে কেবলমাত্র স্বাক্ষর করানো হয়েছে। একটি মামলার আসামি হয়ে সভা ডাকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান খাজুরা পুলিশক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জুম্মান। পুলিশ যাওয়ার খবর পেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে চলে যান সভাপতি। অধ্যক্ষ শামছুর রহমান বলেন,‘গবর্নিংবডির সভা করতে হলে আমাকে জানাতে হবে। বিধি অনুযায়ী আমি সদস্যদের লিখিত নোটিস করব। অথচ আমাকে কিছু না জানিয়ে কলেজ বাদ দিয়ে স্কুলে মিটিংয়ের আয়োজন করে। তাছাড়া, মিটিংয়ের নোটিস ও রেজুলেশন খাতা কলেজের অফিসে রয়েছে। সভাপতি নিজের ইচ্ছেমতো খাতা তৈরি করে মিটিং ডেকেছে। যা বেআইনী।’ এসআই জুম্মান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষককে পাই। তাদের উপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা মিটিংয়ের কথা বলেন। তখন তাদের বলা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি ছাড়া ফের যেন মিটিং করা না হয়।’ যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক বলেন, ‘করোনার এই দুর্যোগে কাউকে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা অন্য যেকোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিতে সবাইকে বলা হয়েছে। খবির-উর-রহমান কলেজের অধ্যক্ষের চাকরির শেষ পর্যায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার চেষ্টা চলছে এমন খবরে আমি সভাপতিকে নিষেধ করি।’ বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ বলেন, ‘খবির-উর-রহমান কলেজের সভাপতি নূরমোহাম্মদ পাটোয়ারীর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে অধ্যক্ষ লিখিত আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আসতে পারে। সভাপতি যে কাজ করছে সেই সম্পর্কে ব্যবস্থা নেয়ার অথরিটি শিক্ষাবোর্ড। আমরা শিক্ষাবোর্ডে সুপারিশ করতে পারি মাত্র।’ যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী বলেন, ‘কাউকে যদি বিধিবহির্ভূতভাবে শাস্তি দেয়া হয় আর তিনি যদি বোর্ডের কাছে প্রতিকার চান তখন বোর্ড আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: