ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানহীন হ্যান্ডরাব, স্যানিটাইজারে সয়লাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২০ জুন ২০২০

মানহীন হ্যান্ডরাব, স্যানিটাইজারে সয়লাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা উপেক্ষিত

রেজা নওফল হায়দার॥ বৈশ্বিক মহামারীতে বাংলাদেশেও করোনা বা কোভিড-১৯ এর ভয়ঙ্কর তান্ডব চলছে। ঘন ঘন জীবাণুনাশক বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি অতি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে ও বাইরে থেকে ফিরে হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাতকে জীবাণুমুক্ত করার ওপরই জোর দিচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের সরকার। ফলে দেশে জীবাণুনাশক ও জীবাণুমুক্তকরণ এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। নকল মাস্ক ও পিপিই কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েকদফা তোলপাড় হলেও এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হচ্ছে নকল ও মানহীন হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া গাইডলাইন বা বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা মেনে তৈরি হচ্ছে না মানসম্পন্ন হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার। নামী বেনামী কোন প্রতিষ্ঠানই এসব সুরক্ষা পণ্য তৈরিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবদ্ধ নির্দেশিকা অনুসরণ করছে না বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে এসব পণ্য ব্যবহার করে প্রকৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষা মিলছে না করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঝুঁকিতে থাকা দেশের কোটি কোটি মানুষের। বরং মানহীন এসব সুরক্ষা পণ্য কিনে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত পাশাপাশি করোনাতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক গাইড লাইন ও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে শতকরা ৭৫ ভাগ আইসোপ্রোপাইল এ্যালকোহল (আইপিএ) অথবা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল থাকতে হবে। কিন্তু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের বাজারে চলমান কোন হ্যান্ডরাব বা হ্যান্ডস্যানিটাইজারে ৭৫ ভাগ আইপিএ বা শতকরা ৮০ ভাগ ইথানল উপাদান বিদ্যমান নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে আইপিএ বা ইথানলের বদলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবেই যেনতেন করে তৈরি হচ্ছে এসব সুরক্ষা পণ্য। অনেক নামী কোম্পানির প্রস্তুতকৃত এসব পণ্যের গায়েও ৭৫ ভাগ আইপিএ বা ৮০ ভাগ ইথানল উপাদান থাকার কথা উল্লেখ নেই। পরিচিত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনুমতি নিয়েই যেনতেন করে তৈরির পর বাজারে ছেড়ে বিপুল মুনাফা লুটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের কিছু কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এর সিডিসি ফরম্যুলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্যানিটাইজার তৈরি করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ফরম্যুলাটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সমর্থন ও গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে বাজারে অসংখ্য নামে হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর একই পরিমাণের কোনটির দাম যেমন ৫০ টাকা আবার কোনটির দাম ২৫০ টাকা। অধিকাংশ বোতলের গায়ে পণ্যের উপাদানের বিবরণ নেই। তৈরির দিন তারিখ বা ব্যাচ নম্বরও নেই। এসব সুরক্ষা পণ্য কিনে প্রতিনিয়ত মানুষ ঠকছে ও করোনার ঝুঁকিতেই পড়ছে। এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্পষ্ট নির্দেশিকায় বলা হয়েছে হ্যান্ডরাব ও হ্যান্ডস্যানিটাইজারে কোন সুগন্ধি মেশানো যাবে না। এই বিষয়ে সতর্ক করে ‘হু’ আরও বলেছে, হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজারে সুগন্ধি বা পারফিউম ও রং মেশানো হলে তাতে এ্যালার্জির উদ্রেক হবে এবং অনেকে এ্যালার্জির সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এ্যালার্জি শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিতে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। কখনও রোগীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু করোনাকে পুঁজি করে বাজারে চলমান এসব হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজারকে আকর্ষণীয় করতে নানান ধরনের রং ছাড়াও সুগন্ধি মেশানো হচ্ছে। ফলে এসব মাণহীন সুরক্ষা পণ্য ব্যবহার করে করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকছে অসংখ্য মানুষ। এই বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য গবেষক ও বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করেই হ্যান্ডরাব ও স্যানিটাইজার প্রস্তুত ও বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী। শুধুমাত্র নিবন্ধিত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান যাতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে এসব পণ্য তৈরি করে তাও কঠোরভাবে নিশ্চিত করা দরকার। বাজারে মানহীন এসব পণ্য থাকলে তার বিক্রি দ্রুত বন্ধ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
×