ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮শ’ ছাড়াল

প্রকাশিত: ২২:০৬, ৬ জুন ২০২০

করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮শ’ ছাড়াল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়াল। আর পাঁচটি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছে একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩০ জনের মৃত্যু এবং ২৮২৮ জন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এই পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৮১১ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬০ হাজার ৩৯১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ৬৪৩ জনসহ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১২ হাজার ৮০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮৮টিসহ এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫টি। পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিবেচনায় শুক্রবার নতুন রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ। শুক্রবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন এবং নারী সাত জন। এদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রামে ১২, সিলেট বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে দুইজন, বরিশাল বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে একজন। এর মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৭ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ১৩ জন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে আছেন ৩৬৫ জন, আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭৩ জন। বর্তমানে মোট আইসোলেশনে আছেন ছয় হাজার ৯৪৬ জন এবং ছাড়া পেয়েছেন তিন হাজার ৮৪৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন দুই হাজার ২৪৫ জন, ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৪৯৫ জন। তিনি আরও জানান, দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২। আর দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে। আক্রান্তে ২১-৩০ বছর বয়সী, মৃত্যুতে বেশি ষাটোর্ধরা ॥ অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এদের আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। এরপরই আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তাদের আক্রান্তের হার ২৭ শতাংশ। তরুণ-যুবকরা বেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যুও হারে এগিয়ে ৬০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধরা। নাসিমা সুলতানা বলেন, লিঙ্গভেদে শনাক্তের হার পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরই আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই বয়সী মানুষদের অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই বয়সের মানুষেরা কর্মস্থলে বেশি থাকেন। বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করেন, কাজের জন্যই হোক বা অন্য কারণেই হোক। যেহেতু তরুণ বয়স, তারা অনেক সময় সতর্কতা ও সচেতনতাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করেন না। এ জন্য ২১ থেকে ৩০ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারা সতর্ক হোন, সচেতন থাকেন। আপনার কারণে যেন আপনার পরিবারের অন্য কেউ যেন ঝুঁকিতে না পড়ে। করোনায় মৃতদের বয়সের হার তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন, ১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃতের হার দশমিক ৮২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সীদের ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিনি বলেন, মৃত্যুর হার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারাও অনেক বেশি সচেতন থাকবেন। যেসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নমুনা পরীক্ষা করছে ॥ সরকার এখন পর্যন্ত ২৫টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে করোনা শনাক্তের অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠান পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। শুক্রবার বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, বেসরকারীভাবে এ পর্যন্ত আমরা ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে (করোনা পরীক্ষার) অনুমতি দিয়েছি। তবে এখনও ২৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করেনি। তারা প্রক্রিয়াধীন আছেন কার্যক্রম শুরু করার জন্য। যেসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে তাদের তথ্য তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা জানান, হাসপাতালগুলোর মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল হাসপাতাল, এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও ল্যাবএইড হাসপাতাল করোনা পরীক্ষা করছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে প্রাভা হেলথ বাংলাদেশ, বায়োমেড ডায়াগনস্টিক, টিএমএফআর মনিকোলার ল্যাব এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক এবং ডিএনএ সলিউশন লিমিটেড করোনা শনাক্তের কার্যক্রম চালু রেখেছে। নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারীভাবেই তারা পরীক্ষা করছে।
×