ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লকডাউনে ১৪৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৬ জুন ২০২০

লকডাউনে ১৪৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের ইতিহাসে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় বিদায়ী ঈদ-উল-ফিতরের যাতায়াতে সড়ক-মহাসড়কে ১৪৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ২৮৩ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ১৫৬ দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত ও ২৮৩ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শুক্রবার সকালে নগরীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গণপরিহন বন্ধ থাকায় ঈদযাত্রা ব্যক্তিগত পরিবহনে সীমিত থাকলেও ঈদের আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল অতীতের তুলনায় বেশি। বিগত ১৯ জুন থেকে ৩১ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ১৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন নিহত ২৮৩ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ১টি ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি। একই সময়ে নৌ-পথে ৬টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৫ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। এই সময় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৫ মে, এইদিনে ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৪ মে, এইদিনে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ২ আহত হয়। এই সময় একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয় গত ১৯ মে এইদিনে ১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ৫৪ জন আহত হয়। এইসময় একদিনে সর্বোচ্চ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ঈদের দিন ২৫ মে, এই দিনে ১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৪৫ জন চালক, ৩৩ জন নারী, ২৮ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৪ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৩ জন শিক্ষক, ৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৩ জন সাংবাদিক, এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে। এই সময়ে এক ঘটনায় অধিক প্রাণহানির ঘটনার মধ্যে উল্লেখ্য, গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে যাত্রীবাহী ট্রাক খাদে পরে ১৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জ সদরেও যাত্রীবাহী ট্রাক উল্টে ৪ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়। রাজধানীর কল্যাণপুরে কার-অটোরিক্সা-কার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২ দশমিক ৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮ দশমিক ২১ শতাংশ অটোরিক্সা, ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ব্যাটারি রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১২ দশমিক ৭ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮ দশমিক ২১ শতাংশ অটোরিক্সা, ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ব্যাটারি রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৮ দশমিক ২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২৭ দশমিক ৫১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ রেল-যানবাহন সংঘর্ষ দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এই সময় দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউনে দেশে গণপরিবহন বন্ধ ছিল, ৯০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এখন ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারীর মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি, তাওহীদুল হক লিটন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এম মনিরুল হক, পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহিন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির আমজাদ হোসেন, মোস্তানসিরুল হক চৌধুরী, জিয়া প্রমুখ।
×