ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানালেন বিজিএমইএ সভাপতি

৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় শতভাগ কর্মী রাখা সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৫ জুন ২০২০

৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় শতভাগ কর্মী রাখা সম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটির পর পোশাকশিল্পে যে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, তাকে অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা বলে উল্লেখ করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক। রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন চালাতে হলে কারখানাগুলোর পক্ষে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না। এটি অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। অবশ্য হঠাৎ করে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই শ্রমিকরাই অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় পোশাক খাতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতির ধাক্কা এসেছে। বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য দেশের প্রথম ‘স্টেট অব দ্য আর্ট কোভিড-১৯ ল্যাব’ চালু উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনার সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার ২৬৪ জন পোশাক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পোশাকশ্রমিকদের করোনা ভাইরাস শনাক্তে গাজীপুরের চন্দ্রায় ডাঃ ফরিদা হক মেমোরিয়াল ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার ল্যাবটি উদ্বোধন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন (এমপি), বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী (এমপি), বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী, ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রমুখ। বিজিএমইএ জানায়, গাজীপুরের চন্দ্রায় স্থাপিত ল্যাবে প্রতিদিন ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিএমইএর সদস্য বড় কারখানার অনেক জায়গা রয়েছে। তারা নিজেদের শ্রমিকদের জন্য আইসোলেশন ইউনিট করতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক পোশাকশিল্প মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘করোনা পরীক্ষা না করালে অনেকে আক্রান্ত হবেন। তাতে শিল্প চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন হলে আরও ল্যাব স্থাপন করুন। আক্রান্ত রোগীকে রাখার জন্য কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন ইউনিট করুন।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে যেসব কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ। তার বাইরে না। কারণ ছাঁটাই অথবা কাজ দেয়া এই দুটিই করতে হয় উদ্যোক্তাদের। তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে বড় একটা সহায়তা পেয়েছিলেন মালিকরা। সেটি জুন মাসে শেষ হবে। তবে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘করোনার এই সময়ে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ শতাংশ ফেরত এসেছে। তবে যারা ফেরত এসেছেন তারা আবার বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছেন।’ বিশ্বে ভোক্তার চাহিদা কমে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে ৬৫ শতাংশ চাহিদা কমে যাবে।’ তাই পোশাকের চাহিদা বাড়ার তেমন সম্ভাবনা কম বলেও জানান তিনি। অর্থাৎ দেশের পোশাক কারখানাও ৫৫ শতাংশ কমে যাবে। এক সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় এখন মানুষ সুস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। ফলে শতকরা ৬৫ শতাংশ অর্ডার কমে যাচ্ছে। চীন থেকে ৫৫ ভাগ বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে দুই শতাংশ কমিয়েছে।’ রুবানা হক বলেন, ‘৪২ হাজার কোটি টাকা মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্ষতি হবে। করোনায় দেশের ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানার ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি দিয়ে চালাতে হবে। জুনে কারখানাগুলোতে ৩০ শতাংশ কাজ হবে।’ তবে যাই ঘটুক, চলতি অর্থবছরে পোশাক খাতে রফতানি আয় ২৩ বিলিয়ন ডলার হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
×