ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২১ মে ২০২০

নিত্যপণ্যে স্বস্তি

এমনটি সচরাচর ঘটে না, অন্তত বাংলাদেশে তো নয়ই। দেশে ও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর চরম দুঃসময়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যখন খাদ্যসঙ্কটসহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে তখন বাংলাদেশে চালসহ কমেছে নিত্যপণ্যের দাম। রাজধানীতে পর্যন্ত গত কয়েক দিনে দাম কমেছে সব রকম চালের। মানভেদে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে তিন-চার টাকা কমে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বোরোর বাম্পার ফলন ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে চালের বজারে। চালের দাম কমলেও সরকার ধান-চাল কেনার ক্ষেত্রে দাম ও সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ায় চাষীরাও এবার ধান-চালের ভাল দাম পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি খোলাবাজারে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ফলে এর সুফল পাচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ শ্রমজীবীরা। করোনা সঙ্কটে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের আয় উপার্জন কমে যাওয়ায় সরকার নগদ অর্থ প্রণোদনাসহ ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপক মাত্রায় সম্প্রসারিত করেছে। এরও সুফল পাওয়া যাচ্ছে বৈকি। এর পাশাপাশি কমেছে ডাল, চিনি, ছোলা, আদা, ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। নিঃসন্দেহে বলা যায়, শ্রমজীবী প্রায় কর্মহীন, আয়-উপার্জনহীন মানুষের সর্বজনীন ঈদ উৎসব এবার ভালোয় ভালোয় কাটবে। টিসিবিসহ সরকারের নানামুখী আন্তরিক উদ্যোগ-আয়োজনে এবার বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তা স্বীকার করতে হবে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, আড়তদারসহ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দাপট এবার কম। তারা অসৎ পথ অবলম্বন করার সুযোগ পাননি তেমন। ফলে এর সুফল পাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। অথচ প্রতি বছরই রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়ে। এবার তা হতে পারেনি সময়োচিত সরকারী হস্তক্ষেপের ফলে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ, গুঁড়া দুধ, চিনি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দাম তেমন না বাড়া সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন কিছু পণ্য, যেমন গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। গরম মসলার দামও মনিটরিং করা বাঞ্ছনীয়। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাম কমানোর কথা বলেও কথা রাখেননি মসলা ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এবার সেটি হতে পারেনি। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা, আসন্ন ঈদে নিত্যপণ্যের দাম আর যেন আর না বাড়ে। টিসিবির নিত্যপণ্যের ট্রাকসেল এবার এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ অবদান রেখেছে।
×