ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

লকডাউন শিথিল করে দেশকে বিপদে ফেলেছে সরকার

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২০ মে ২০২০

লকডাউন শিথিল করে দেশকে বিপদে ফেলেছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যেই দেশে লকডাউন শিথিল করে সরকার দেশকে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলের করোনা সেলের পক্ষ থেকে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, করোনায় মৃত্যুর হার দিন দিনই বাড়ছে, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। ফখরুল বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ ঘোষণা দিয়ে দোকান, রেস্তরাঁ খুলে দিয়েছে। এটা সামাজিক দূরত্বের বিধির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। লকডাউন শিথিলের ঘোষণার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা মোকাবেলা দূরে থাক, সারাদেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার মানুষকে ঘরে রাখতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে সাধারণ ছুটির আইনগত ক্ষমতা নেই। সরকার এজন্য যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে নিজেদের অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে সরকারী দলের নেতাকর্মীরা লুটপাটে লিপ্ত বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ত্রাণ চুরি ও ভুয়া তালিকা প্রণয়ন সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)ও সিপিডির বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। তিনি বলেন, সরকার যতটুকু ত্রাণ দিয়েছে তা সব দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বা অন্য দলের লোকদের ত্রাণ দেয়া হয়নি। তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৩ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। এ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে প্রায় ৭৫টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ইমারজেন্সি বিভাগে প্রায় দুই হাজার পূর্ণাঙ্গ পিপিই সরবরাহ করেছে। সেইসঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে ড্যাব সদস্যরা দেশের সাধারণ মানুষেদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাপনা সরকারের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, করোনার টেস্ট করতে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকার ঘোষিত ৪২টি সেন্টারের কয়েকটি সেন্টার কার্যকর নয়। যেসব সেন্টারে টেস্ট হচ্ছে তাও অপর্যাপ্ত। মানুষ লাইন ধরে ফিরে যাচ্ছে টেস্ট না করে। তিনি বলেন, দাম্ভিকতা ছাড়া এ সরকারের আর কিছুই নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা, সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতা ও একগুয়েমি মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। করোনা রোগী শনাক্তের পর সরকারের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতায় এখন প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্তান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না করোনা আক্রান্তরা। করোনা টেস্টেও জন্য শাহবাগে লম্বা লাইন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও টেস্ট করাতে না পেরে সড়কেই ছেলেমেয়ের চোখের সামনে প্রাণ হারিয়েছেন এক বৃদ্ধ। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে তাতেও দিনে ১০ হাজারে ওঠেনি। এর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ শতাংশে উঠেছে। যদি বেশি টেস্ট হতো তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বেড়ে যেত। তিনি বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় বিনা চিকিৎসায় পথে, ঘাটে, ফুটপাথে লাশ পড়ে থাকছে। সিলেট কারাগারে একজন বন্দীর করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও বিভিন্ন কারাগারে আক্রান্ত রোগীদের কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দাবি করেন মির্জা ফখরুল। এ ছাড়া তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান। আর কৃষকরা যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়, বিশেষ করে আমের মৌসুমে আম-লিচু চাষীদের পণ্য বিক্রির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। ফখরুল বলেন, করোনাভাইরাসে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন বিশেষ করে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ব্যাংকার, পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ তাদের প্রতি শোক প্রকাশ করছি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যারা করোনা মহামারী মোকাবেলায় অগ্রসেনানী হিসেবে কাজ করছেন। ফখরুল বলেন, প্রায় সোয়া দুই মাস আগে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর সরকারের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতায় এখন প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্তান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। যখন চীনে করোনা মহামারী শুরু হলো তখন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। তখন তারা অন্য একটি অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রথম থেকে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আজ লাশের সারি দীর্ঘ হতো না। তিনি বলেন, জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে সরকার মানুষকে বাঁচাতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যদি তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন তাহলে তারা এমন আচরণ করতেন না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির করোনা পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।
×