ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোম কোয়ারেন্টাইনের বিকল্প হতে পারে হোটেল কোয়ারেন্টাইন

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৯ মার্চ ২০২০

হোম কোয়ারেন্টাইনের বিকল্প হতে পারে হোটেল কোয়ারেন্টাইন

রশিদ মামুন ॥ নরসিংদীর একটি গ্রামের জনৈক প্রবাসী। বিদেশ থেকে ফিরে স্বাস্থ্য বিভাগের আদেশ অমান্য করে নিজের মতো করে চলাফেরা করছিলেন। প্রতিবেশীরা দেখে খবর দিলেন পুলিশে। কিন্তু তাকে ধরে কে? পুলিশ দেখে দিলো দৌড়। এরপর বহু কষ্টে বাগে এনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ওই ব্যক্তিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে এলো পুলিশ। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ইতালি প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ গেল অনুরোধ করতে। কিন্তু তিনি উল্টো মিথ্যা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করলেন ওই প্রবাসী। আর ইতালি ফেরতদের হজ ক্যাম্পে রাখতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কেউ কেউতো বলেই ফেললেন আমার টাকায় দেশ চলে আর আমি এর মধ্যে থাকব। শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। আর এই প্রবাসীরাই গ্রামে গিয়ে করোনা ছড়িয়ে দিলো। সরকারের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বরাবর প্রবাসীদের অভিযোগ রয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় অভিযোগ উঠছে অন্যদেশের সরকারের বিরুদ্ধেও। থাকার যায়গাটা ভাল না খাওয়াটাও ভাল না। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এমন অভিযোগকারীদের জন্য হোটেল ঠিক করে দিয়েছে। প্রবাসীদের সরকারী ব্যবস্থাপনা পছন্দ না হলে পয়সা দিয়ে এসব হোটেলে থাকতে পারবেন। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়াতে দেশের আবাসিক হোটেলগুলোকে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। সরকারী অফিস আদালত আর বিদেশ থেকে মানুষের আসা যাওয়া বন্ধ থাকাতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখন ফাঁকা হোটেল পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ হবে না। এক্ষেত্রে সরকার পশ্চিমবঙ্গের মতো হোটেলে থাকার জন্য টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার হোটেল কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্দেশনায় বলছে সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রবাসীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সরকারী ব্যবস্থাপনা অনেকের অপছন্দ সেজন্য তিন তারকা হোটেলের পাশাপাশি কিছু সাধারণ মানের হোটেল নির্দিষ্ট করা হয়েছে এসব হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকা যাবে। কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রে হোটেলের কক্ষটি আলোবাতাস পূর্ণ হতে হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের পরই হোটেলের বাইরে পা রাখতে পারবেন। আর হোটেলে থাকা অবস্থায় তাকে সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। আর প্রতিদিন তার ঘরটি জীবাণুনাশক দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। আর খাবার দেয়ার সময় যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে যেসব প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের পয়সার অভাব নেই। ফলে এ ধরনের ব্যবস্থা তারা মেনে নিতে পারেন। চীন করোনা থেকে মুক্তি মেলার ঘোষণা দিলেও সেখানে অন্যদেশ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। সেই হিসেবে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসার পরও আমাদের এখানে কোয়ারেন্টাইন চালু রাখতে হবে। ফলে বিদেশ থেকে কেউ এলেই তার কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হোটেলই বিকল্প সমাধান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে বাধ্যতামূলকভাবে রাখার নীতি চালু করলে করোনার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে। এতে ওইসব ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাড়ি ফিরতে না পরলে তিনি তার পরিবারকে আক্রান্ত করবেন না। অবার পরিবার সমাজকে আক্রান্ত করবে না। বিমান বন্দর থেকে বিদেশ ফেরতদের যে তথ্য দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই তালিকা আর পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠিয়েছে। পুলিশ এই তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে বলছে অনেক প্রবাসীকে তারা পাচ্ছেন না। যা নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। এর মধ্যে জাতীয় টেলিকম মনিটরিং সেন্টার যে তথ্য দিয়েছে তা আতকে ওঠার মতো তারা বলছে এক কোটির বেশি গ্রাহক সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণায় ঢাকা ছেড়েছে। আর এর মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ প্রবাসী রয়েছেন। যারা কোথায় গেছে না গেছে আর কোন হদিস নেই সরকারের কাছে। আনন্দ বাজার পত্রিকার খবর অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার করোনা চিকিৎসা দেয়া ডাক্তারদেরও হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। ডাক্তারদের নিজেদের এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই ব্যবস্থা বলে জানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একজন চিকিৎসক যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাচ্ছেন তখন তার মধ্যে যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে না তা নিশ্চিত হওয় বলা কঠিন। ওই অবস্থায় তিনি বাড়িতে ফিরলে অন্যদেরও এই ভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে। স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ বাড়ি গেলে তার সন্তান এবং স্ত্রী কাছে আসে। ফলে তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। পৃথিবীর তাবৎ রোগীর কাছে চিকিৎসক মানেই ইশ^রের প্রতিরূপ। এক মহানামব। কিন্তু রোগাক্রান্তের রোগেই চিকৎসক আক্রান্ত হন এমনটি কেউ চায় না। কিন্তু করোনার সংক্রমণের পর অনেক চিকিৎসক রোগীর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণও দিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে এই ক্রান্তিকালে পৃথিবীর এই বীর চিকিৎসকরা কয়েকটা দিন বিচ্ছিন্ন থাকলে নিত্য আতঙ্ক থেকে পরিবারেও মুক্তি পেত। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ছয় লাখ দুই হাজেরর বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৮৯ জন। প্রতি মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ছে।
×