মার্চের ভাষণ
সম্পদ বড়ুয়া
মার্চের ভাষণ যেন চেতনার লাল রঙে আঁকা,
বিষাদের সুর তুলে অনবদ্য গল্প বলা,
ভাইয়ের বুকের রক্তে রাজপথ হল রক্তমাখা,
বাংলার মানুষ চায় স্বাধীনতা, দৃপ্ত পায়ে চলা।
মার্চের ভাষণ যেন স্বাধীনতা, সংগ্রাম মুক্তির,
শত্রুশিবিরে পাঠায় লাল চিঠি, ভয়ের ফরমান।
জেগেছে বাঙালী আজ, কণ্ঠে দাবী অকাট্য যুক্তির,
যা কিছু রয়েছে সাথে তাই নিয়ে তৈরী কোটি প্রাণ।
মার্চের ভাষণ যেন বজ্রকণ্ঠ, স্ফুলিঙ্গ আঁধারে,
অকূল পাথারে দিশা, চেতনার বিদ্যুৎ বিকাশ।
প্রতিটি মনের কোণে বহ্নিশিখা সরায় বাধারে,
সময় এসেছে নিতে পাওনার হিসাব নিকাশ।
মার্চের ভাষণ যেন অমানিশা শেষে নব সূর্যোদয়,
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, জেগে ওঠে স্বাধিকার বোধ,
‘জয় বাংলা’ কণ্ঠে নিয়ে ইতিহাসে দৃপ্ত অভ্যুদয়,
ঘরে ঘরে দুর্গ তুলে গড়বে সবে শক্ত প্রতিরোধ।
মার্চের ভাষণ যেন কালজয়ী অমর কবিতা,
আকাক্সক্ষা-বঞ্চনা-আশা, বাঙালীর ন্যায্য অধিকার
এক সুরে গাঁথা আছে স্বপ্নময় বর্ণিল ছবি তা।
কবির কবিতাখানি পাঠ হবে জানি বার বার।
মার্চের ভাষণ আজ ইতিহাস, অবিনাশী গান,
সারা বিশ্ব চেয়ে রয়, বাংলাদেশ অপার বিস্ময়,
‘প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ বলে ইউনেসকো দিয়েছে সম্মান,
মানুষের মাঝে ঠাঁই চিরদিন অম্লান অক্ষয়।
** তোমার জন্ম দিনে
দুলাল সরকার
তোমার জন্ম দিনে, আমি বৃন্দাবনে
চারিদিকে মোহন বাতাস, পুলকিত বৃক্ষালয়
পাতার মজলিশে বসে পাখিরা কূজন গায়
ময়ূর পেখম তুলে নৃত্যরত ডালে ডালে ——-
হরিণীরা কীযে খুশী আপন কস্তুরি গন্ধে
অকারণ ছুটাছুটি, প্রজাপতি ফুলে ফুলে কীযে কয়
মৌমাছি মধুরত———ফুলের সঙ্গ প্রিয়
ঋতুবতী ফুলগুলি কাছে ডাকে——-আয়, আয় ;
সখিদের সাথে রাধা শূন্য কলস কাঁখে
যমুনায় যাবে বুঝি ঢেউগুলি তাই খুশি
রাধার গমন পথে তট ছেড়ে তাই উঠে
ঢেউয়েরা পড়ছে লুটি রাধা রাণী ঐ বুঝি——
রাধাকে বলছে গিয়ে, জানো আজ জন্ম দিন কার?
টুঙ্গিপাড়ার পাশে মধুনদী সে আমার প্রিয় সখি
আমি তার পেয়েছি বার্তা তার কুলে জন্মেছে নতুন শিশু
তাঁর নাম মুজিবুর, সে নাকি জনক হবে বাংলার
জয়টীকা দেখেছে কপালে।
** মার্চপোস্ট
মাসুদ মুস্তাফিজ
দৃশ্য আছে-
মজ্জা আছে-
আছে দৃশ্যের মনোহরি বসবাস
ভেসে যাচ্ছে দিন-
ভেসে যাচ্ছে কুতকুতি হাঁসি-
তাই আজ টাঙ্গিয়ে রেখেছি ধুলিমাখা জীবনের পথ
আর হৃদয়ের মাপে মাপে পুষে রেখেছি আমার অস্তিত্বের
অহংকার-প্রিয় বাংলাদেশ
আজ অচেনা বাতাস কেন জানি বুক কাঁপিয়ে তোড়পার করছে শব্দকলি!
মনের অকৃত্রিম ভাঁজে ভাঁজে অজ্ঞাত নদীর বয়ে যায়
জলমন কষ্টে জলমেয়ে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আর রক্তের শ্বাসে
রাজপথে সংবিধান-
শক্ত রক্তের ভেতর কালো ছায়া
বিপন্ন পৃথিবী পুড়িয়ে বাংলাদেশ বেঁচে থাকে ভালবাসার নোনাজলে!
** হাজার বছর পরে
বাদল আশরাফ
হাজার বছর পরে
তুমি যে বড়
আঁকছো আমারই প্রতিকৃতি
আহা! বাঙালি
এমন আবেগের শেষ নেই বুঝি!
পুষ্পে শোভিত উদ্যান
কিংবা মেঘমল্লারে
আসক্ত হও বা না হও
হয়েছো দারুণ
মেঘ ছোঁয়া অধিবাসী-
বেড়াও ছায়াপথ জুড়ে
যখন তখন,
খুঁজে পাও আকাশ গঙ্গায়
কতনা বিচিত্র বিভাস
বাতাবরণের দুরূহ দুয়ার .......
তোমাদের কল্পলোক বলে
যদিও কিছু নেই
তবুও সম্ভ্রমে
আস্থায়
বিকশিত হও ক্রমাগত
আমারই সোনার বাংলায়-
হাজার বছর পরে
যেখানে ঈশ্বর কণা
শিশুদের সহজ শতকিয়ার মত!
বহু মাত্রিক জীবন তোমাদের
বাঁচো একই নিউরনে
অভাবিত-
আত্মীয় এবং যৌগিক স্বজনসহ!
তোমাদের নৃতাত্ত্বিক ব্যাকরণ
খুঁজে পায় নক্ষত্রপুঞ্জের উৎস
অধিবাস,
তারপরও আকাশ গঙ্গার পাশাপাশি
রক্তগঙ্গা
একুশের মিনার
৭ই মার্চের নির্দেশ
গিরিবাজ পায়রার খেলা
তোমাদের আলোড়িত করে
হাজার বছর পরও
হে আমার অজেয় উত্তরাধিকার......।
** যোদ্ধারা বেঁচে থাকে সবুজের মাঝে লালবৃত্ত হয়ে
মনসুর আজিজ
যুদ্ধ কি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা;
নাকি এফোঁড় ওফোঁড় করে নির্মাণ করা জীবন বাঁচানোর ভেলা
শত্রুর রক্ত কি স্বজাতির বিশুদ্ধ নিঃশ্বাসের প্রস্তুতি-
নাকি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে একটি জাতির ধমনীতে বয়ে দেয়া রক্তপ্রবাহ
মার্চের গনগনে রোদ্দুর গায়ে মেখে যারা গেয়ে গেছে ফসলের গান
দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যারা গেয়েছে জীবনের সঙ্গীত
প্রস্তুতিহীন আসরে যারা কণ্ঠে মিলিয়েছে কবিতার পঙ্ক্তি-কোরাসে
প্রতিটি শব্দ যেন বুলেটের নির্মম নিশানা...
সময়ের পারদ নেমে গেলে কী করে ভুলে থাকা যায় যুদ্ধের উত্তাপ
পত্ পত্ করে উড়তে থাকা পতাকার পেটের ভেতর জেগে ওঠে যোদ্ধার নিঃশ্বাস
বাতাসের ঝাপটায় কানে এসে বলে-
এই তো আমি বেঁচে আছি সবুজের মাঝে লালবৃত্ত হয়ে
প্রতিদিন আঁধার ভেদ করে যেমন জেগে ওঠে ভোরের লাল সূর্য।
** গোলাপ সংক্রান্ত
জহুরুল ইসলাম
গতকাল গোলাপের কোমল শরীরে
ছুঁয়ে গেছে প্রজাপতি।
নীল জলে ভরে ওঠে
তার- দুটি নধর আকাশ।
সাপের ফণার মতো
ঢেউ-দূরন্ত উল্লাসে মাতে।
বৃন্দাবনের জলের পাড়ে
অনলের চিতা।
অসংখ্য গোলাপ
গহন সংকোচে মরে।
** চাবিওয়ালা
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
ঝুনঝুন করে হেঁটে যাওয়া চাবিওয়ালার বিস্ময়কর ক্ষমতা বিস্মিত করে এসেছিল সেই শৈশবকাল হতে; গোলাকার রিংয়ে গাঁথা নানান কায়দার টিনের পাত আর তালা খোলার কারিগরিতে সিদ্ধহস্ত দুটি হাতে নিমিষেই দেয়া দরকারি আকৃতি ছড়াত অপার মুগ্ধতা!
কী বিপুল সম্ভাবনায় হেঁটে যেত, বন্ধ-তালার চাবি-হারিয়ে-ফেলা মানুষের কাছে।
অবরুদ্ধ পৃথিবীর সবখানে তালা বন্ধ করে চাবিগুলো ছুড়ে দিতে চাই মধ্য-সাগরে; তাবৎ চাবিওয়ালার আজ মৃত্যু হোক করোনার আক্রমণে!
শীর্ষ সংবাদ: