ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিকের মশাল গ্রহণ করেছে জাপান

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২১ মার্চ ২০২০

অলিম্পিকের মশাল গ্রহণ করেছে জাপান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের দাপট এখন বিশ্বজুড়ে। এর বাইরে নয় ক্রীড়াঙ্গনও। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় টোকিও অলিম্পিকের আয়োজন নিয়ে দেখা যাচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা। তথাপি এরই মধ্যে স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্রীড়ার মহাযজ্ঞ অলিম্পিক গেমসের মশাল গ্রহণ করেছে জাপান। বিশেষ একটি বহর দিয়ে মশাল বাহী চার্টার বিমানকে অভ্যর্থনা জানিয়ে অবতরণ করায় জাপান। এ সময় জাপানের অলিম্পিক কমিটির সদস্যরা গেমসটি স্থগিতের আহ্বান জানালেও অলিম্পিক কমিটির প্রধান থমাস বাখ ‘ভিন্ন পরিস্থিতিতে’ গেমস আয়োজনের কথা বিবেচনা করছেন। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিবেচনা করছি। তবে সাড়ে চার মাস আগে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন এবং পেশাদার লীগের বিপরীতে রয়েছি। এই মুহূর্তে স্থগিতের কথা ভাবা ঠিক হবে না। কারণ এখনও এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসেনি। টাস্ক ফোর্সের কাছ থেকে আমরা এখনও সেরকম কোন পরামর্শ পাইনি।’ কোভিড-১৯ এর আগ্রাসনে গেমস আয়োজনে অনিশ্চিয়তার মধ্যেই শুক্রবার জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় মাতসুশিমা বিমান ঘাঁটিতে অলিম্পিক মশালের আগমন ঘটেছে। তবে কথা ছিল ২০০ স্কুল শিশুদের নিয়ে এই মশাল আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে। কিন্তু তার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি বাতিল করতে বাধ্য হয় জাপানের আয়োজকরা। এর পরিবর্তে কয়েক ডজন অতিথি ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মশালে আগুন প্রজ্বলন করেন সাবেক অলিম্পিক জুডো চ্যাম্পিয়ন সাওরি যোশিদা ও তাদাহিরো নুমুরা। এসময় টোকিও অলিম্পিকের প্রধান যোশিরো মরি বলেন, ‘অলিম্পিক মশালকে স্বাগত জানানোর কথা ছিল শিশুদের। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছি।’ আগামী ২৬ মার্চ শুরু হবে অলিম্পিক মশালের দেশব্যাপী পরিভ্রমণ। ২০১১ সালে ভূমিকম্প, সুনামি ও পারমাণবিক বিপর্যয়ে পড়া জে-ভিলেজ স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে শুরু হবে এই মশাল র‌্যালি। তবে র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা বাতিল করা হয়েছে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২৪ জুলাই থেকে অলিম্পিক শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অলিম্পিককে কেন্দ্র করে জাপানে যে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো প্রায় সবই থমকে আছে। জাপানের অধিকাংশ এ্যাথলেট, সাধারণ মানুষ বা ব্যবসায়ীদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই পরিস্থিতিতে অলিম্পিক হওয়া এক প্রকার অসম্ভব। কিন্তু আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা এবং জাপানের অলিম্পিক সংস্থা এখনও বলছে ঠিক সময়েই অলিম্পিক হবে। এই দোলাচলে অলিম্পিককে কেন্দ্র করে যে ব্যবসা কেন্দ্রগুলো তৈরি হওয়ার কথা, সেখানে চরম অনিশ্চয়তা। জাপানের চর্মজাত পণ্যের অন্যতম বড় একটি সংস্থা ফুজিটার কর্ণধার টোসিয়া ফুজিটা যেমন মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত দ্রুত হলেই ভাল। কারণ তার সংস্থা বুঝতে পারছে না ঠিক কত ‘অলিম্পিক কি-চেইন’ তৈরি করবে। কোকা কোলা, টয়োটা, স্যামসাং এবং গুগল-এর মতো বহুজাতিক সংস্থা, যারা অলিম্পিক স্পন্সর করছে, তারাও দ্বিধায় ভুগছে। বড় হোটেল সংস্থা এয়ার বিএনবি, নিরাপত্তা সংস্থা এবং ট্র্যাভেল এজেন্টরাও বিপাকে। তারা একদিকে অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য বাতিলের কথা মাথায় রেখেও ‘প্ল্যান বি’ ছকে রাখছেন ওইসব সংস্থার বড় কর্তা। ফুজিটার সংস্থার কর্মী মৌরিয়া যেমন বললেন, ‘গেমস যদি বাতিল হয়, তা হলে আমাদের বেশ কিছু জিনিস বেঁচে যাওয়ার কথা, যাতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। তাই আমরা মার্চের মধ্যে চূড়ান্তভাবে জানতে চাই, অলিম্পিক হবে কি না।’ টোকিওর উপকণ্ঠে একটি বড় হোটেল চেনের মালিক টোরো সুজুকি বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। অলিম্পিকের সময়ের মধ্যে আমরা কোন বুকিং পাইনি। সাধারণভাবে এই সময় যা বুকিং হয়, তার থেকে ৭০-৮০ শতাংশ কম বুকিং আমরা পাচ্ছি। আর এপ্রিলে যেহেতু একের পর এক বুকিং বাতিল হয়েছে, তাই আমরা বদলি বুকিংও করতে পারছি না।’ অলিম্পিকের ওয়াটার স্পোর্টস হওয়ার কথা এনোসিমা দ্বীপে। সুয়সি এবং ইজুমি ফুকাসে ওই দ্বীপে একটি রিসোর্ট তৈরি করেছিলেন, এই আশায় যে অলিম্পিকের সময় তাদের এই রিসোর্ট ভর্তি থাকবে। এখন পর্যন্ত অলিম্পিকের সময় মাত্র দুটো বেড রুম বুক করা হয়েছে। সেটাও করেছে জার্মানির দল। ফুকাসের কথায়, ‘এখন যদি অলিম্পিক বাতিল হয়, তা হলে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমরা রেকর্ড মুনাফার জন্য এত খরচ করে অলিম্পিকের জন্য এত বড় বিনিয়োগ করেছি। না হলে পাহাড়সম ক্ষতি হবে।’
×