ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সে রক্ষণশীলতা ॥ ডিভোর্স আজও বেআইনী

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৮ মার্চ ২০২০

ফিলিপিন্সে রক্ষণশীলতা ॥ ডিভোর্স আজও বেআইনী

ফিলিপিন্স দেশটির জনগণ অতিমাত্রায় রক্ষণশীল আইন-কানুনের দ্বারা আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। ভ্যাটিকান সিটির কথা বাদ দিলে বলা যায় ফিলিপিন্সই একমাত্র দেশ যেখানে মুসলমান বাদে অন্যদের বেলায় বিবাহ বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ। বৈবাহিক সম্পর্কের অবসান ঘটানোর একটাই মাত্র উপায় আছে এবং তা হলো এটাকে বাতিল করা। তবে সেটাও যে চাইলেই করা যাবে এমন নয়। এর সে রকম শক্ত ভিত্তি থাকতে হবে এবং ব্যাপারটা বেশ ব্যয়বহুলও বটে। অনেকটা মৃত্যুবরণের মতো কাছাকাছি। দেশটিতে গর্ভপাতও বেআইনী। গর্ভপাতের ক্ষেত্রে যা করা হয় এবং যে গর্ভপাত ঘটায় তাদের উভয়েরই ৬ বছর পর্যন্ত কারাদ- লাভের ঝুঁকি আছে। গর্ভনিরোধ উপকরণ নিষিদ্ধ না হলেও এ নিয়ে তীব্র আইনী লড়াই চলে। রাষ্ট্রকে এসব সামগ্রী বিতরণে বাধা দেয়ার জন্য বিরোধীরা চেষ্টা চালাতে ভুল করে না। ফিলিপিনোদের এই অবস্থা যে ঔপনিবেশিক শাসনের জের তা বলা যাবে না। মেক্সিকোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। দুটো দেশই ছিল স্পেনের উপনিবেশ। ফিলিপিন্সের ৮৬ শতাংশ ক্যাথলিক। মেক্সিকোর ক্যাথলিকের সংখ্যা জনগোষ্ঠীর পাঁচ-চতুর্থাংশ। ১৯৭৪ সালে গৃহীত নতুন আইনে মেক্সিকানদের গর্ভনিরোধ ব্যবস্থার সুযোগ লাভের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে সে দেশে সমলিঙ্গের বিবাহকে বৈধতা দেয়া হয় এবং পরের বছর গর্ভপাতকেও বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। ফিলিপিন্সের আইন এসব বিষয়ে যত রক্ষণশীল ফিলিপিনোরা কিন্তু তত রক্ষণশীল নয়। তাদের অর্ধেকেরও বেশি মনে করে যে বিবাহ বিচ্ছেদকে বৈধতা দেয়া উচিত। এই তথ্য ২০১৭ সালের এক জরিপের। সেই একই জরিপ অনুযায়ী ১০ জন ফিলিপিনোর মধ্যে ৭ জন গরিবের মধ্যে জনবিরোধ উপকরণ বিতরণে সরকারকে সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা সংবলিত একটি আইন সমর্থন করে। ২০১২ সালে প্রণীত এই আইনটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। এমন ফিলিপিনোর সংখ্যা প্রচুর যারা প্রকাশ্যেই সমকামী। গত বছর ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক গে-প্যারেডে প্রায় ৭০ হাজার নর-নারী অংশ নিয়েছিল। সমকামী ফিলিপিনোরা সঙ্গীত থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত সব ধরনের ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন করে থাকে। ২০১৬ সালে এক ট্রান্সজেন্ডার নারী কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর তিনি ৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হন। কিন্তু ফিলিপিনোর এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন জাতীয় আইন-কানুনে তেমন একটা নেই কেন? এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে রাজনীতি ও ধর্মবিশ্বাসের দুর্ভাগ্যজনক মিশ্রণের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ফিলিপিনো ধর্মকে অতি গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করে বলে ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়। একই বছরের আরেক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ১০ জন ভোটারের প্রায় ৪ জন এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী থাকে যিনি তাদের চার্চ বা ধর্মীয় সংগঠনের অনুমোদনপ্রাপ্ত। সাম্প্রতিককালে অবশ্য ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। চার্চে সাপ্তাহিক উপস্থিত হওয়া ক্যাথলিকদের সংখ্যা ১৯৯১ সালে যেখানে ছিল ৬৬ শতাংশ সেখানে ২০১৭ সালে তা হ্রাস পেয়ে ৪৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব দি ফিলিপিন্স-এর ফাদার জেনোধ সেসিলানোর দেশের সনাতনী মূল্যবোধের অবক্ষয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। প্রেসিডেন্ট দুতার্তের জনপ্রিয়তা এমনই প্রবল যে তিনি ঈশ্বরকে নির্বোধ এবং পোপকে বেজন্মা আখ্যা দেয়ার পরও চার্চকে তার বিরুদ্ধে লড়তে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধে পুলিশ সন্দেহভাজন হাজার হাজার ব্যক্তিকে গুলি করে মেরেছে। ক্যাথলিক চার্চের বিরোধিতা করলেও কোন লাভ হয়নি। রাজনীতিতে ক্যাথলিকদের প্রভাব খর্ব হওয়ার পর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের গুরুত্ব ও প্রভাব বাড়ছে। ফিলিপনোদের মাত্র ১০ শতাংশ প্রোটেস্ট্যান্ট বা ইভান জেলিকান। তারা এখন গণনায় ধরার মতো রাজনৈতিক লবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা বিবাহ বিচ্ছেদ, সমলিঙ্গের বিবাহ ও গর্ভপাতের ঘোর বিরোধী। ইভান জেলিকরা অনেক সময় রাজনীতি ও ধর্মকে একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। রাজনীতিতে এরা অনেক সোচ্চার। সিনেটের ম্যানি প্যাকুইয়াও তার ধর্মান্ধতার জন্য সুপরিচিত। তিনি সমকামীদের জন্তুর চেয়েও খারাপ আখ্যা দিয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছেদকে বৈধতা দেয়ায় বিলের বিরুদ্ধে প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও বর্তমানে এই বিল নিয়ে কংগ্রেসে আলোচনা চলছে। বিলটির ব্যাপারে ধর্মীয় বিরোধিতা এতই প্রবল যে, প্রেসিডেন্ট দুতার্তে নিজেও এই বিলটি সমর্থন করছেন না। এনামুল হক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×