ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেজিংয়ে ফিরে যাওয়া প্রত্যেককে ১৪ দিন বাধ্যতামূলকভাবে পৃথক থাকতে হবে

বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন

ছুটি কাটিয়ে চীনের রাজধানী বেজিংয়ে ফিরে যাওয়া প্রত্যেককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে (অন্যদের থেকে দূরে অবস্থান) থাকার নির্দেশ দিয়েছে বেজিং। করোনা মোকাবেলায় শুক্রবার সর্বশেষ এই পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়। বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে বেজিং ফেরা প্রত্যেককে হয় নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে অথবা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কোন স্থানে গিয়ে থাকতে হবে। এপি ও বিবিসি। ডিসেম্বরে হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছির ১ হাজার ৫২৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবারে চীনা নববর্ষের ছুটি বাড়ানো হয়। চীনা নববর্ষের ছুটিতে বেজিংয়ের দুই কোটি বাসিন্দার বেশিরভাগই দেশটির অন্যান্য অংশে পরিবারের কাছে চলে যান। ছুটি কাটিয়ে এসব বাসিন্দারা যখন ফিরতে শুরু করে তখনই তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চীনের বাইরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে ২৪টি দেশে পাঁচ শ’রও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে একজন করে মোট তিনজন। চলতি সপ্তাহে চীনে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন একটি দল। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দলটি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া এবং এর তীব্রতা তদন্ত করবে। এছাড়া এক হাজার সাত শ’রও বেশি চিকিৎসা কর্মী কিভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাও খতিয়ে দেখবে দলটি। দলটিতে ১২ জন আন্তর্জাতিক সদস্যের পাশাপাশি থাকবেন ১২ জন চীনা বিশেষজ্ঞ। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখ-ে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৪২৯ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মিসরে প্রথমবারের মতো একজন বিদেশীর শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাকে আগে থেকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আফ্রিকায় নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ঘটনা এটা। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তাতে বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৫২৬ জনে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রীতিমতো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চীন, কিন্তু খব বেশি সাফল্য তাতে আসছে না। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শি জিংপিনকেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। শুক্রবার চীনে যে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৩৯ জনেই ছিলেন হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১০৭ জনই আবার উহানের। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন ও চীনের বাইরে বেশ কিছু ক্রীড়া আয়োজন ও বাণিজ্য সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জাহাজ ও বিমান চলাচলে কড়াকড়িতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অতিপ্রতিক্রিয়া’ দেখানোর অভিযোগ এনেছে চীন। দেশটির পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সংক্রমণ হঠাৎ হয়েছে এবং চীনসহ পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এদিকে চীনে করোনায় আক্রান্ত ছয় চিকিৎসা কর্মীর মারা গেছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু চিকিৎসাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’ ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে সম্প্রতি মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেলেও ভাইরাসের তীব্রতা বা মৃত্যুহারে বড় কোন পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
×