ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমতলীতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ১২:১১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আমতলীতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, ৩ ফেব্রুয়ারি ॥ যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূ মনিরা আক্তারকে নির্যাতন করে স্বামী নুর মোহাম্মদ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত মনিরার মা আসমা বেগম এ অভিযোগ করেন। ঘটনা ঘটেছে রবিবার রাতে তালতলীর পাঁচশ’ বিঘা হোসেন মিয়ার ইটভাঁটিতে। আমতলী থানা পুলিশ গৃহবধূ মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে এবং মনিরার স্বামী নুর মোহাম্মকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রেখেছে। জানা গেছে, বরগুনার সদর উপজেলার ছোট লবণগোলা গ্রামের মোঃ কামাল হাওলাদারের মেয়ে মনিরা আক্তারের সঙ্গে আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া গ্রামের ছত্তার মোল্লার ছেলে নুর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করে আসছিল। গত বছর মার্চ মাসে পরিবারের অসম্মতিতে দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে মনিরা তার স্বামী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে অবস্থান করে। গত তিন মাস পূর্বে স্বামী নুর মোহাম্মদ তালতলী উপজেলার পাচশ’বিঘা গ্রামের হোসেন মিয়ার ইটভাঁটিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। ওই খানে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী মনিরাও থাকত। বিয়ের পর থেকে স্বামী নুর মোহাম্মদ যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে স্ত্রী মনিরাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করায় মনিরা এ নির্যাতনের কথা কাউকে জানায়নি। নীরবে সহ্য করে আসছিল সে। গত এক মাস ধরে স্বামী নুর মোহাম্মদ স্ত্রী মনিরাকে মায়ের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। হতদরিদ্র মনিরার মা তালাকপ্রাপ্ত আসমা বেগম এ টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে মনিরাকে প্রায়ই নুর মোহাম্মদ নির্যাতন করে আসছিল বলে এমন অভিযোগ মা আসমা বেগমের। মায়ের কাছ থেকে টাকা না আনায় ঘটনার দিন রবিবার দুপুরে মনিরাকে স্বামী নুর মোহাম্মদ অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্যাতন করে। ওইদিন সন্ধ্যায় ঘরের মধ্যে মনিরার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ সময় ওই ঘরে স্বামী নুর মোহাম্মদ ও স্ত্রী মনিরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। দ্রুত নুর মোহাম্মদ মনিরাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। হাসপাতালে এনে নুর মোহাম্মদ কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে জানান ঘুমের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। অনেক চেষ্টা করেও জ্ঞান ফিরছে না। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকদের তার কথায় সন্দেহ হয়। পরে তারা মনিরার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে এবং তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং স্বামী নুর মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রাখে। সোমবার মনিরার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এদিকে নুর মোহাম্মদ পুলিশকে জানায়, মনিরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু নিহত মনিরার মামা মিন্টু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাগ্নিকে ওর স্বামী নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
×