ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ দ্বিতীয় টি২০তে বাংলাদেশ হারলেই সিরিজ পাকিস্তানের

হারে শুরু বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

 হারে শুরু বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি থেকে ৭১ রান আসে। কিন্তু এরপর যে ধস নামে, তাতে বাংলাদেশ আর বড় স্কোর গড়তে পারেনি। তাতে করে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০তে ৫ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। পাকিস্তান সফর হার দিয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। জয় পেয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও যায় পাকিস্তান। আজ দুই দলের মধ্যকার দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যদি এই ম্যাচেও বাংলাদেশ হেরে যায়, তাহলে ২-০ ব্যবধানে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নেবে পাকিস্তান। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা খুবই মন্থর গতিতে ব্যাটিং করেন। টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। উইকেটে যে বোলাররা বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না, তা ভেবেই আগে ব্যাটিং নেয়া হয়। যদি বড় স্কোর গড়া যেত, তাহলে পাকিস্তানকে ভীষণ চাপে ফেলা যেত। কিন্তু তা করা যায়নি। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ব্যাট করতে নেমে সর্বনিম্ন স্কোরই গড়েছে বাংলাদেশ। ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪১ রান করতে পারে বাংলাদেশ। আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার (১৪৭/৭)। সেই ম্যাচটি অবশ্য শ্রীলঙ্কা ১৩ রানে জিতে নিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা এবার খুবই সতর্ক হয়ে খেলেন। কোন তাড়াহুড়ো করেননি। শেষমুহূর্তে যায় খেলা। তবে ধীর স্থিরে খেলাতেই তা হয়। ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯.৩ ওভারে ১৪২ রান করে ম্যাচ জিতে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৮ রান করেন শোয়েব মালিক। ব্যাটসম্যানরা ভাল কিছু করতে যদি পারতেন, ম্যাচ হয়ত বের করা যেত। কারণ, বোলাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। রানের খাতা খোলার আগেই যেমন বাবর আজমকে আউট করে দিয়েছেন শফিউল ইসলাম। দলের ৩৫ রান হতেই মোহাম্মদ হাফিজকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন। অভিষেক টি২০ ম্যাচেই ঝলক দেখানো এহসান আলিকে (৩৬) আউট করে দেন। পাকিস্তানও চাপে পড়ে। কিন্তু অভিজ্ঞতা যে কী জিনিস, তা বুঝিয়ে দেন শোয়েব মালিক। ৪৭ রানে ক্যাচ হওয়া থেকে বেঁচে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলকেও জেতান। মালিককে আউট করা গেলে আর শেষমুহূর্তে ৪ বলে যে জিততে ২ রান দরকার ছিল, তখন মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ধরতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। ধরতে পারলে ৩ বলে ২ রান লাগত। তখনও বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার আশা থাকত না। কিন্তু আরেকটু ইতিবাচক থাকাত। কিন্তু দলের ১২৫ রানে মুস্তাফিজের বলে মালিকের ক্যাচটি যদি ধরা যেত, তাহলে হয়ত ম্যাচ অন্যরকম হতে পারত। তবে সবকিছুর উপরে আসলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। বড় স্কোর গড়তে পারেননি। সেটিই আসল বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বঙ্গবন্ধু বিপিএল খেলেই পাকিস্তান সফরে যায়। টি২০ খেলায় অভ্যস্থ থেকেই পাকিস্তান যায়। কিন্তু তামিম ইকবাল যেমনটি বিপিএলে মন্থর ব্যাটিং করেন, তেমনটিই এবারও করেন। তার সঙ্গে নাঈম শেখও খুব দ্রুতগতিতে ব্যাটিং করতে পারেননি। তবে দুইজন মিলে দলকে ৭১ রানে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরই সব ওলট পালট হয়ে যায়। কোথায় শেষমুহূর্তে ঝড়ো ব্যাটিং করবেন ব্যাটসম্যানরা, উল্টো মন্থর ব্যাটিং করতে থাকেন। আর উইকেটও পড়তে থাকে। নিজের স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান করার পর তামিম আউট হতেই যেন ধস নামা শুরু করে দেয়। দলের ৯৮ রানে যখন লিটন কুমার দাস ও নাঈম শেখ (৪৩) আউট হয়ে যান, বড় স্কোর হওয়ার আশাই যেন শেষ হয়ে যায়। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুব, সৌম্য সরকারদের কাছ থেকে কিছুই মিলেনি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৯*) একটু হাল ধরলে দল ১৪১ রানে যেতে পারে। এই রান করে কী আর জেতা সম্ভব? ভারতকে তাদেরই মাটিতে সর্বশেষ টি২০ সিরিজে কাঁপায় বাংলাদেশ। প্রথম টি২০ ম্যাচটি জিতে সিরিজ জয়ের আশা তৈরি করে। শেষপর্যন্ত পারেনি। কিন্তু এবার র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে থাকা পাকিস্তানকে হারানোর স্বপ্ন থাকে। সেই স্বপ্ন প্রথম ম্যাচে দুঃস্বপ্ন হয়েই থাকে। ২০০৮ সালের পর পাকিস্তানে গিয়ে ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানীদের কণ্ঠে প্রশংসার শেষ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সমর্থকদের প্রশংসায় ভাসতে হলে তো জয় দরকার। সেই জয়টি প্রথম টি২০তে মিলেনি। হাতে আছে আরও দুটি টি২০ ম্যাচ। আজ দ্বিতীয় ও সোমবার তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। যে কোন একটি ম্যাচে অন্তত জিতলে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো ম্যাচ জেতা হবে। নিষিদ্ধ হওয়ায় সাকিব আল হাসান নেই সফরে। মুশফিকুর রহীম সফরে যাননি। তাতে করে বাংলাদেশ দল আগে থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বল দল নিয়ে বড় স্কোর না গড়লে কী আর ভাল কিছু মেলে? বৃহস্পতিবার শিরোপা হাতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম হাসতে থাকেন। সিরিজের প্রথম টি২০তে সেই হাসি বাবরের মুখে লেগে থাকল। পাকিস্তানের মাটিতে এর আগে চার টেস্ট, একটি টি২০ ও ১১ ওয়ানডে খেলে সবকটিতে হারে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে সর্বশেষ টি২০ ম্যাচটিই পাকিস্তানের মাটিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার যখন আবার সফরে যায় বাংলাদেশ, টি২০ ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু হয়। এবারও হারল বাংলাদেশ। হার দিয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।
×