ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জি-২০-এর সদস্য!

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

জি-২০-এর সদস্য!

স্বাধীনতার ৪৮ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে, যা অবশ্যই ঈর্ষণীয় ও গর্ব করার মতো। সম্প্রতি ‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্স-এ’ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি দেশের শীর্ষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। গত ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ। ওই সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬৭ শতাংশ এবং ভারতের ১১৭ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ধারাবাহিক অর্জনে খুব শীঘ্রই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জি-২০-এর সদস্যভুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক্স এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩২ সালের মধ্যে বিশ্বের বড় ২৫টি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে ৪১তম অবস্থান থেকে তখন বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩২তম। তবে এই অবস্থায় পৌঁছাতে হলে অনিবার্য কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে গিয়ে নিক্কাই ইন্টারন্যাশনালের সংবাদপত্র নিক্কাই এশিয়ান রিভিউয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাতকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। বাংলাদেশের চলমান দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে এবং তার ফলে বাড়বে প্রবৃদ্ধি। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২৫ শতাংশ এবং তা বাড়ছে অব্যাহতভাবে। সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়ে বলেছিলেন, যদি নির্বাচিত হই তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতিতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে ২০২১ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ১০ শতাংশে। ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। এর সপক্ষে প্রধানমন্ত্রী কতিপয় জোরালো যুক্তিও তুলে ধরেন। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এর মধ্যে ১১টি চালু হয়েছে, ৭৯টি প্রক্রিয়াধীন। মাত্র সাত দিনে এসব জোনে বিদ্যুত দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতায় রূপপুরে নির্মাণাধীন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ পাওয়া যাবে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে, যেটির দরপত্র আহ্বান করা হবে আগামী বছর। ইতোমধ্যে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। দেশে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ ভাগে। হতদরিদ্র মানুষের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩ ভাগে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সরকার তা পারবে বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত কয়েক বছরে দেশে গণতন্ত্রের পতাকাবাহী জাতীয়তাসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে সরকার। সে অবস্থায় আগামীতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব হবে না।
×