ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ছয় শিল্পীর জলছবিতে ‘পুরান ঢাকার রূপকথা’

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

ছয় শিল্পীর জলছবিতে ‘পুরান ঢাকার রূপকথা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উচ্চকিত রঙের ছোঁয়ায় উজ্জ্বল ক্যানভাস। দীপ্তিময় সেই চিত্রপটে দেখা মেলে পুরান ঢাকার নিজস্ব রূপটি। আকাশজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে লাল-নীল ঘুড়ি। জমিনে কিছু দালান কোঠার মাঝে বিশেষভাবে উঁকি মারছে হলুদ রঙা মসজিদের মিনার। সেই মিনারের ওপর বসে আছে একঝাঁক পাখি। চলছে পাখিদের পারস্পরিক কিচির-মিচির। আরেক ছবিতে সরু গলির সড়কজুড়ে মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করে নিয়েছে ত্রিচক্রযান রিক্সা। গ্যালারিজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি ছবিতেই উঠে এসেছে পুরান ঢাকার গল্প। চিত্রায়িত হয়েছে শতবর্ষের প্রাচীন দালানকোঠা, ঐতিহাসিক স্থাপনা, মসজিদসহ সেসব অঞ্চলের যাপিত জীবন। ছয় শিল্পীর সম্মিলিত প্রয়াসে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আঁলিয়স ফ্রঁসেস দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। জলরঙে চিত্রিত জলজ শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘পুরান ঢাকার রূপকথা’। যৌথ প্রয়াসের এই চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন বিপ্লব চক্রবর্তী, মোঃ আজমল উদ্দিন, গোলাম মশিউর রহমান চৌধুরী, আল-আঁখির সরকার, শ্যামল বিশ্বাস ও সাদেক আহমেদ। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ‘জলজ’ নামের প্রতিষ্ঠানের আশ্রয়ে তরুণ শিল্পীদল হাজার বছরের পুরনো নগরের এই আত্মাকে তাদের শিল্পকর্মে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন; যে শহর তাদের জঠরে ধারণ করে ও তাদের শিল্পীসত্তাকে মাতৃস্নেহে লালন ও বিকশিত করেছে। এই শিল্পীদের প্রাণের শহর ঢাকা, বিশেষ করে সেই অংশ যাকে সবাই বলে ‘পুরান ঢাকা’। শতাব্দীর পর শতাব্দী দীর্ঘ পরিক্রমায় কালের সাক্ষী হয়ে থাকা নগরীর নিঃশব্দ নিঃশ্বাস রূপান্তরিত হয়েছে চিত্রকর্মে। শহরের সেই অংশটি ঋদ্ধ ঐতিহ্য ও বহুবিচিত্র সংস্কৃতির ছবি এঁকেছেন এই শিল্পীদল। অন্তিম শ্বাসের বুকচেরা গভীরতায় ক্ষীয়মান নগরীর কালজয়ী ঐশ্বর্য উদ্ভাসিত হয়েছে ক্যানভাসে। শিল্পায়োজনটি প্রসঙ্গে আপন অভিমত ব্যক্ত করেন এতে অংশ নেয়া শিল্পী শ্যামল বিশ্বাস। তিনি বলেন, যদিও প্রতিটি শহর গড়ে ওঠে প্রাণহীন কংক্রিট আর টন টন যান্ত্রিক কাঠামো নিয়ে, তথাপি তারা তো আর যন্ত্রের মাফিক পরিকল্পিত বা প্রকৌশলে তৈরি নয়! প্রতিটি নগরের গহীনে রয়েছে তার আত্মা, যা স্পন্দিত হয়, শ্বাস নেয় এবং মৃত্যুবরণও করে। প্রতিটি নগর তার স্বকীয় বাস্তুতন্ত্র বা ইকো-সিস্টেম সৃষ্টি করে, তার দীর্ঘ ক্রমবর্ধমান জীবনের সঙ্গে সঙ্গে যা গড়ে ওঠে। যখন নগর তার বিভিন্ন উপাচার, এলাকা, পার্ক, পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়, সেভাবেই তার নক্সা পরিকল্পিত ও গঠিত হয়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে একটি নগর তার আচরণের যূথবদ্ধতায় বিকশিত হয় যা সমস্ত প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট বিবর্ধনের মাঝেও হারিয়ে যায় না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই নগরটির বিভিন্ন অংশ সাজিয়ে গড়ে তোলে যাতে তা শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর গড়ে তোলা স্থাপনা নয়, বরং যেন হয়ে ওঠে এক জীবিত সত্তা, যাকে আমরা অনায়াসে বলতে পারি ‘নগরের আত্মা’। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কালচারের (ইউনিক) ‘মুক্ত ঐতিহ্য সপ্তাহ ২০১৯’ উদযাপনের অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ইউনিকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ, গোয়েটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন ও ঢাকাস্থ স্পেনীয় দূতাবাস। জলরঙে আঁকা ৬৩টি ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। ১০ ডিসেম্বর থেকে সূচনা হয়ে শিল্পায়োজনটি চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা এবং শুক্র ও শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×