ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসের মধ্যে টাকা না দিলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে যাবে

অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করুন ॥ গ্রামীণফোনকে আপীল বিভাগ

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করুন ॥ গ্রামীণফোনকে আপীল বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার নিরীক্ষা দাবির নোটিসের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। গ্রামীণফোন ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাও বাতিল হয়ে যাবে। তখন গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে যে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাবে বলে বিটিআরসির আইনজীবী জানিয়েছেন। আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। অন্যদিকে, বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। আপীল বিভাগের আদেশের পর বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে আপীল বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে। তবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, আজ (রবিবার) থেকে তিন মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। পরে গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই হাজার কোটি টাকা না দিলে তিন মাস পরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আমরা আদেশ পাওয়ার পর ক্লায়েন্টের (গ্রামীণফোন) সঙ্গে আলাপ করব। রিভিউ করব কি না তা দেখা হবে। তিন মাস সময় আছে। এক মাসের মধ্যে রিভিউ যেন সুযোগ আছে। বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, ‘বিটিআরসির যে পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে তারা (গ্রামীণফোন) যদি দুই হাজার কোটি টাকা এখন না দেয়, তাহলে হাইকোর্ট থেকে যে নিষেধাজ্ঞা নিয়েছিল সেটা ভ্যাকেট (প্রত্যাহার) হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এর অর্থ হলো এখন গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতেই হবে। তারা যদি না দেয় তাহলে বিটিআরসির যে কোন এ্যাকশন নিতে আর কোন আইনী বাধা থাকবে না। আদেশের অনুলিপি পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। এখন কথা হচ্ছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, যদি তারা দুই হাজার কোটি টাকা দেয়। ‘অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো ফাইনাল সেটেলমেন্ট না। এখন দুই হাজার কোটি টাকা দিলে পরবর্তীতে যদি দেখা যায়, মামলায় বিটিআরসি আরও বেশি টাকা পায় তাহলে দেবে। সুতরাং আমরা আপাতত সন্তুষ্ট। এটা তো ফাইনাল না। আমরা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। এটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। হাইকোর্টেও আছে। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরেই কেবল জানা যাবে বিটিআরসি আর কত টাকা পাবে বা পাবে না।’ এর আগে গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি আদায়ের ওপর দুমাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে গ্রামীণফোনের কাছে ওই টাকা দাবি আদায়ের ওপর হাইকোর্টের দু’মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আবেদন করে। গত ১৪ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে শুনানিতে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকের প্রস্তাব অনুয়ায়ী দুই শ’ কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে বিটিআরসিকে দিতে সম্মতির কথা জানায় গ্রামীণ। তবে, এর বিরোধিতা করে বিটিআরসির আইনজীবী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে বিটিআরসির পাওনা আদায়ের ওপর হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা আমরা স্থগিত চাই।’ এর আগে গত ৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে গ্রামীণফোনের এক সমঝোতা বৈঠকে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো : এক. দুইপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে, দুই. বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শাও নোটিস ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে, তিন. অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন, চার. কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রামীণফোন এক শ’ কোটি ও পরের এক মাসের মধ্যে এক শ’ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে। রবি দুই দফায় দেবে ৫০ কোটি টাকা, পাঁচ. এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে।
×