ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাবনায় ৬ মাসেই সড়কে ধস

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

পাবনায় ৬ মাসেই সড়কে ধস

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২৪ নবেম্বর ॥ ফরিদপুর উপজেলা এলজিইডি’র অধীনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আরটিআইটি-২ প্রকল্পেলর প্রায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ছয় মাস না যেতেই ধসে গেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীদের যোগসাজশে যেনতেনভাবে কাজ করায় কার্পেটিং ওঠাসহ সড়ক ধসে গেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ী ইউনিয়নের পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়কটি চলতি বছরের বছরের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। সড়ক নির্মাণের ৬ মাস পার না হতেই সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের কার্পেটিং উঠে যাওয়াসহ বেশিরভাগ জায়গা ধসে গেছে। কার্পেটিংয়ে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার ও মাটি সঠিকভাবে কম্প্যাকশন না করায় কয়েক মাসেই সড়কে ভারি যান চলাচল বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সড়কের আরও কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে এসব অংশ যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন। এদিকে ফরিদপুর উপজেলা এলজিইডি অফিস একটি সূত্র জানিয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব অর্থায়নে জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ফরিদপুর উপজেলা এলজিইডি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির কার্যাদেশ পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল নিজে কাজ না করে পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে বিক্রি করে দেন। ২০১৬ সালের শেষে সড়কের কাজ শুরু করা হয়। এদিকে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে সড়ক নির্মাণ বন্ধ করে দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করেন। এ আবেদনে এলজিইডি’র জেলা ও উপজেলা অফিসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সড়ক নির্মাণে বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রাক্কলন রিভাইজ করে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঠিকাদারের প্রাক্কলন অর্থ বাড়িয়ে দেন। চলতি বছরের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সে সময় ঠিকাদার বসে যাওয়া স্থানগুলো দায়সারাভাবে মেরামত করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণে খালের পাশের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটির আস্তরণ দেয়া হয়। সড়কের ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচ থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত সিসি ব্লক বিছানো হয়েছে। সঠিকভাবে সিসি ব্লক পিসিং ও জোড়া দেয়া হয়নি। ফলে সিসি ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে ভেতরের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সড়ক ধসে গেছে। এছাড়া সিসি ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্য গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানি বাড়ার কারণে অনেক স্থানেই গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও ভিত্তি মজবুত না হওয়ায় হেলে পড়েছিল। এতে গাইডওয়াল ও সিসি ব্লকসহ সড়ক ধসে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণেই সড়ক ধসে নেমেছে। বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের ছয় মাস না হতেই ধসে পড়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এলজিইডি অফিসের সড়ক নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের মান খুব ভাল ছিল। কিন্তু এবছর আগাম বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়।
×