স্টাফ রিপোর্টার ॥ যত্রতত্রভাবে গাড়ী রেখে যানজট সৃষ্টি করা বন্ধে ও সড়কে শৃংখলা আনতে নবেম্বর ডিসেম্বর দু মাসে প্রচারণা চালানো ও কঠোরভাবে সবকিছু মনিটরিং করা হবে। তবে ১ জানুয়ারী থেকে কোন পথচারী নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে যত্রতত্রভাবে রাস্তা পার হলে সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পথচারীদের জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম। একইসাথে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর আসাদ এভিনিউয়ে গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর সামনে ডিএনসিসি কতৃক স্থাপিত ডিজিটাল পুশ বাটন পর্যবেক্ষণ এবং ট্রাফিক সচেতনতা কার্যক্রম করার সময় মেয়র এসব কথা বলেন এ সময় মেয়রের সাথে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও স্থানীয় কমিশনারসহ সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও স্থানয়ি গণ্যমান্য বিভিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে নাগরিকদের সহায়তা করতে ও এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করতে নিজেই বাশি ফুঁকে প্রায় ২ ঘন্টা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা গেছে। সিগনালের ফাঁকে ফাঁকে নিজেই বাস ট্রাক, রিক্সা, প্রাইভেটকার চালকসহ স্থানীয় নাগরিকদের পুশ বাটন কেনো চাপবেন ও কেনো সবুজ বাতি লাল বাতি জ্বলে থামতে হবে এবং কখন গাড়ি ছাড়তে হবে তার নিয়মাবলী অবগত করেন। এ সময় তিনি দোকানপাঠ, ছাত্রছাত্রী অভিভাবকদের কাছে ট্রাফিত আইন মানতে ও সরকারের সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সম্পর্কিত নানা লিফলেট বিতরণ করেন।
মেয়র আতিক বলেন, সড়ক আইন-২০১৮ এর উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় নয়। সড়কে শৃংখলা আনাই মূল লক্ষ্য। মানুষ যেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং আইন মেনে চলে সেজন্যই শাস্তি এবং জরিমানা বাড়িয়ে নতুন আইন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই কঠোরভাবে আইন মানা হয়। সবখানেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। এর মূল কারণ আইন অমান্য করলে কঠিন শাস্তি এবং বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। এছাড়া আমাদের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কেউ আইন ভঙ্গ করে না। সেখানে আইন ভঙ্গ করলে বড় ধরনের জরিমানা ও শাস্তি পেতে হয়। কিন্তু ওই একই চালক ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসলে আইন অমান্য করে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এক ধরনের আচরণ এবং বাইরে আরেক ধরনের আচরণ হতে পারে না। তাই এর জন্য সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে তা না হলে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট হবে না।
সচেতনতামূলক কার্যক্রম শেষে মেয়র গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় তিনি সিদ্ধান্ত দেন স্কুলের সামনে বসানো ডিজিটাল পুশ বাটন ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক এবং স্কুলের পক্ষ থেকে দুই শিফটে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে মূল দায়িত্ব পালনে অবশ্যই স্কুল কতৃপক্ষতে সহায়তা করতে হবে বলে জানান। স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হলে আমাদের এই বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে হবে। একসময় আমাদের দেশে সিনেমার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।
যখন এর উন্নতি হচ্ছে তখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে কোর্স চালু করেছে। আমাদের দেশে এখন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করতে হবে। মেয়র গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পার্কিংয়েরর গাড়ীগুলো অন্যত্র সরিয়ে রাখার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন ও রাস্তায় গাড়ীর যানজট কমাতে ও নাগরিক দূর্ভোগ বন্ধ করতে স্কুল ছুটির সময় স্কুলটির দুটি গেইটই খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া স্কুল কতৃপক্ষ প্রতিটি শিশুর অভিভাববককে তাদের গাড়ী যেনো রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি না করেন সেজন্য ঘেষণা দিতে ও অভিবভাবকদের স্কুলের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদানের নির্দেশ দেন।
মেয়র বলৈন, প্রাথমিকভাবে নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সচেতনতামূলক কাজ চললেও পুশ বাটনে চাপ দেয়ার পরও রাস্তায় গাড়ী না থামলে ও ট্রাফিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আগামী জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার হলে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করা হবে ও ভিডিও দেখে গাড়ীর বিরুদ্ধে জরিমানা আদায় করা হবে। তিনি বলেন, স্কুলের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ী কোনক্রমেই রাখতে দেয়া হবেনা এবং চাত্রছাত্রীদেও আনা নেয়ার জন্য স্কুল বাস সার্ভিস চালূর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে আহ্বান জানান। মেয়র বলেন, আমরা রাজধানীর প্রতিটি স্কুলে স্কুলবাস চালু করা যায় কিত না তা পরীক্ষা করছি। প্রাথমিকভাবে জার্মান সরকারের সাথে আলোচনাপূর্বক কমপক্ষে ২০ টি স্কুলবাস আনা যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে।