ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাকু ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

বাকু ঘোষণা

বিশ্বের ১২০টি উন্নয়নশীল দেশের ফোরাম দু’দিনব্যাপী ন্যাম সম্মেলন শেষ হয়েছে বাকু ঘোষণার মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, এক সময়ে অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। এখানেই শুক্রবার বাকু কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ তথা নির্জোট সম্মেলনের ১৮তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরেও সদস্যদেশভুক্ত অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। বাকু ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্জোট শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয় শনিবার। এবারের সম্মেলনের অন্যতম একটি অর্জন হলো, ন্যাম সদস্য রাষ্ট্রসমূহ বর্তমান ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটের নতুন বাস্তবতায় এর প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালার বিকাশ এবং তা সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আন্দোলনকে সক্রিয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পথে সম্ভাব্য হুমকি ও চ্যালেঞ্জসমূহের প্রেক্ষাপটে নির্জোট রাষ্ট্রসমূহ ঐক্যবদ্ধ এ অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুংয়ে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ‘বান্দুং এশিয়ান-আফ্রিকা কনফারেন্স’ শীর্ষক একটি সম্মেলন। যেটি প্রকৃতপক্ষে ন্যামের সূতিকাগার বলে অভিহিত করা যায়। পরে ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত হয় ন্যামের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে অংশগ্রহণ করে ২৫টি দেশ। তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে পঞ্চশীলা নীতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ছিল সর্বাধিক সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী জোট। যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসের, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নের মতো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ন্যামের ভুবন একসময় আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছিলেন। পরে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনসহ অনিবার্য ভাঙ্গনের পর একক দানবীয় পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় একচ্ছত্র অভ্যুদয় ঘটলে ন্যামের ভূমিকা অনেকটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। সুযোগ্য নেতৃত্বের সঙ্কটও দেখা দেয়। যা হোক, দীর্ঘদিন পরে হলেও বাকুতে অনুষ্ঠিত ১৮তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের প্রাসঙ্গিকতা ও ভূমিকাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে সেই সময়ে যখন দেশে দেশে গণতন্ত্রের নামে নিছক জনতুষ্টিবাদ নির্ভর প্রায় একনায়কসুলভ সরকারের আবির্ভাব ঘটছে। সঙ্কুচিত হচ্ছে জনগণের ন্যায্য অধিকার, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার। সর্বোপরি সন্ত্রাস, যুদ্ধ বিগ্রহসহ তীব্র শরণার্থী সমস্যা সমগ্র বিশ্বকে ব্যতিব্যস্ত ও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জন ও ক্রমোন্নতি সত্ত্বেও প্রধানত শরণার্থী সমস্যা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা সমস্যা-সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, যা মোকাবেলা করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ন্যাম সদস্যভুক্ত দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক্ষেত্রে অবশ্যই ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। সমসাময়িক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত, পর্যাপ্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ‘বান্দুং নীতিমালা’ সমুন্নত রাখা প্রয়োজন ও অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা একটি রাজনৈতিক সঙ্কট এবং এর মূল নিহিত মিয়ানমারে। আর তাই মিয়ানমারকেই এর সমাধান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওআইসির পাশাপাশি ন্যাম সদস্যভুক্ত দেশগুলো প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে মিয়ানমারের ওপর। ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন এক্ষেত্রে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ অবদান রাখবে বলেই প্রত্যাশা।
×