ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধূম্রজালে মাসুদ রানা!

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ৩ অক্টোবর ২০১৯

ধূম্রজালে মাসুদ রানা!

গত এক মাসে ‘মাসুদ রানা’ নামটি নিয়ে যত খবর ছাপা হয়েছে এবং প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সমসাময়িক বিনোদনের অন্য খবরে এত আলোচনা হয়েছে বলে মনে হয় না। মাসুদ রানা বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে বেশ পরিচিত শব্দ যুগল। গোয়েন্দা সিরিজ মাসুদ রানার পাঠক আমাদের দেশে অগণিত। রাজপথ থেকে পাড়া-মহল্লার পত্রিকার টোং দোকানে গোয়েন্দা সিরিজ মাসুদ রানার কপি পাওয়া যায় না এমনটা কিন্তু বিরল। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট মাসুদ রানার প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ নামে। গুপ্তচরবৃত্তীয় এই সিরিজ সর্বশেষ পর্যন্ত ৪৫০টি বই আকারে বের হয়েছে। রোমাঞ্চপ্রেমী তরুণ পাঠক এই গোয়েন্দা সিরিজের বিশেষ ভক্ত। কাজেই গত কয়েক মাস আগে যখন ঘোষণা আসে জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ নামে সিনেমা নির্মিত হবে তখন থেকে দেশের সিনেপাড়া এবং ভক্তকুলের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়। প্রথমে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টি মিডিয়া থেকে জানানো হয় অডিশনের মাধ্যমে মাসুদ রানার প্রধান চরিত্র পছন্দ করা হবে। মাস কয়েক আগে থেকে শুরু হয় অডিশন পর্ব। আগ্রহী সাধারণদের নিয়ে চলতে থাকা অডিশন পর্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এসবের মধ্যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে খবর আসে মাসুদ রানার নায়িকা হিসেবে ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় করবেন এই সময়ের বলিউড সুপারস্টার অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুর। যদিও বছর বিশেক আগে শ্রদ্ধার বাবা শক্তি কাপুর ‘এরি নাম দোস্তি’ নামক সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমন বাস্তবতার নিরিখে অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, এবার তার মেয়ে ঢাকাই সিনেমায় ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করবেন। গত শনিবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, আলোচনা সমালোচনার গ-ি উতরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘কে হবেন মাসুদ রানা’ নামক শো থেকে নির্বাচিত হয়েছেন রাসেল রানা নামে এক সুদর্শন যুবকে। তিনিই হচ্ছেন এবারের মাসুদ রানা! এ বিষয়ে তাকে নিয়ে খবর ছাপা হয়। পরে অবশ্য মাসুদ রানার চরিত্রে এবিএম সুমনের নাম গণমাধ্যমে এসেছে। সিনেমার নায়ক যখন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল তখন সামনে আসে আগে থেকে ঘোষণা দেয়া নায়িকার প্রসঙ্গ অর্থাৎ শ্রদ্ধা কাপুরের বিষয়। ঠিক এই সময় এক বিস্ময়কর বার্তা আসে মাসুদ রানা নিয়ে যারা বেশ কৌতূহলী তাদের কাছে। সম্প্রতি ভারতের মুম্বাই থেকে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশে এই সিনেমার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। এমনকি তার গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে এটি ভুয়া খবর। এই যখন বাস্তবতা তখন আবারও ভুল তথ্য দিয়ে নিজেদের সঠিক বলবার চেষ্টা করেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান- ব্যস্ততা, টাইম সিডিউল ইত্যাদি কারণে শ্রদ্ধা এই প্রোজেক্টের সঙ্গে থাকতে পারছে না। অথচ এর আগে তারা বলেছেন, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের সাইনিং মানির একটা অংশ পাঠানো হয়েছে। এরপর আসছে সিনেমার চিত্রায়াণ, জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে আগেই জানানো হয়েছে, সিনেমার ৫০ ভাগ শূটিং হবে মরিশাসে কিন্তু পরে এসে জানানো হয় শূটিংবান্ধাব না হওয়ার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা ভাবা হচ্ছে। এমন একাধিক ধু¤্রজাল তৈরি হয়েছে মাসুদ রানা নিয়ে। এই যখন অবস্থা তখন ২০১৯ সালের মাসুদ রানা চলচ্চিত্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে কৌতূহলীদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনভাব দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছে সবই ‘মার্কেটিং পলিসি’ বলে উল্লেখ করছেন। তা না হলে একটি প্রজেক্ট নিয়ে এত বিভ্রন্তকর তথ্য কেমন করে পরিবেশিত হয়। এবার আসা যাক চলচ্চিত্রে ‘মাসুদ রানা’র কথায়, বাংলাদেশে ২৪ মে ১৯৭৪ সালে মাসুদ পারভেজের (সোহেল রানা) পরিচালনায় ‘মাসুদ রানা’ নামের চলচ্চিত্র রূপালি পর্দায় মুক্তি পায়। নির্মিত হয় এই সিনেমার গল্পও কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট মাসুদ রানার অনুপ্রেণায়। সিনেমার প্রধান চরিত্র মাসুদ রানা হয়েছিলেন পরিচালক নিজে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ নির্মিত হয় মাসুদ রানার ‘পিশাচ দ্বীপ’ কাহিনী অবলম্বনে, যার চিত্রনাট্য লেখেন আতিকুল হক। নাটকে মাসুদ রানা চরিত্রে নোবেল এবং সোহানা চরিত্রে বিপাশা হায়াত কে দেখা যায়। জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের হিরো মাসুদ রানাকে পর্দায় দেখা এদেশের সিনেমা প্রেমীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নয়। কিন্তু যখন একবিংশ শতাব্দিতে এসে প্রায় এক শ’ কোটি টাকার বাজেটে মাসুদ রানা নির্মাণের ঘোষণা আসে তখন সবার মধ্যে এক ধরনের রোমঞ্চকর অনুভূতি সঞ্চার হবে এটাই স্বাভাবিক। আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
×