ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় উৎসবের বর্ণিল রূপ, মাঙ্গলিক সামগ্রীর পসরা

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শারদীয় উৎসবের বর্ণিল  রূপ, মাঙ্গলিক  সামগ্রীর পসরা

মোরসালিন মিজান ॥ পুজোর রং ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। তবে আলাদা করে বলতে হয় শাঁখারি বাজারের কথা। পুরান ঢাকার ছোট্ট গলি হলেও এলাকাটি এখন দারুণ জমজমাট। শাঁখা শিল্পের নিদর্শনসহ বহুবিধ পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসছেন। চলছে উৎসবমুখর কেনাকাটা। শারদীয় দুর্গোৎসবের বর্ণিল রূপটি দেখা যাচ্ছে এখানে। শুধু দেখার জন্য অনেকে এখানে ছুটে আসছেন। প্রাচীন গলি ধরে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতিহাসবিদদের মতে, সতের শতকে মোগলদের সঙ্গেই ঢাকায় আসেন শাঁখারিরা। সেই থেকে এখনও একই জায়গায় আছেন। পারিবারিক পেশা ধরে রেখেছেন অনেকেই। বলা হয়ে থাকে শঙ্খ অসুর নামে এক দানবকে অগস্ত্য মুনি হত্যা করেছিলেন। হত্যায় তিনি যে করাত ব্যবহার করেছিলেন সে ধরনের করাত দিয়েই প্রথমে শাঁখা কাটা হতো। এখন আর তা হয় না। মেশিনের যুগে প্রবেশ করেছে শাঁখা শিল্প। পুজো উপলক্ষে দিন রাত চলছে মেশিন। নতুন নতুন ডিজাইনের শাঁখা গড়ছেন কারিগররা। এগুলো পরে চলে আসছে দোকানে। রাস্তার দুই ধারে অনেকগুলো দোকান। লক্ষ্মী ভা-ার নামের একটি দোকানে ঢুকে দেখা গেল নারী ক্রেতারা ভিড় করে আছেন। যে যার মতো করে শাঁখা দেখছেন। শান্তা নামের এক নারী শাঁখা পরেই এসেছিলেন। তারপরও এক জোড়া কিনলেন তিনি। কেন? জানতে চাইলে বললেন, হাতে নয় শুধু, আমার বাসায় একবাক্স ভর্তি শাঁখা আছে। কিন্তু পুজোয় নতুন চাই। নতুন শাঁখা না পরলে সাজটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকেও শাঁখার আলাদা গুরুত্ব আছে বলে জানান তিনি। দোকানের মালিক অমিয় কুমার সুর জানান, বংশ পরম্পরায় ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে শাঁখা গড়ার কাজ করছেন তারা। সারা বছরই কম বেশি বিক্রি হয়। তবে পুজোয় সবচেয়ে বেশি চাহিদা বলে জানান তিনি। মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয় নামের আরেকটি দোকানে গিয়ে কথা হয় সদানন্দ নাগের সঙ্গে। ৬০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। পুজোয় ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ক্রেতারা আসছেন। সারাদিনই শাঁখা দেখাতে হচ্ছে। যার যেমন পছন্দ কিনছেন। তবে শাঁখারি বাজারে এখন আর শুধু শাখা বিক্রি হয় না। নানা রকমের পণ্য দিয়ে সাজানো। কাঁসা পিতলেরও বড় সংগ্রহ এখানে। পাওয়া যাচ্ছে প্রতিমা সাজানোর শাড়ি গহনা মুকুট। মা বাসন্তী ভা-ার নামের একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেল, মুকুট তৈরির কাজ হচ্ছে। দোকানের মালিক শঙ্কর সরকার জানালেন, এইসব মুকুট প্রতিমার মাথায় পরানো হবে। একেকটির একেক রকম ডিজাইন। নামও আছে আলাদা আলাদা। এই যেমন : বাংলা চূড়া, অরিয়েন্টাল, লক্ষ্মী বাংলা ইত্যাদি। গত তিন চার মাস ধরে কাজ করছেন জানিয়ে দোকানি বলেন, ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে। বিভিন্ন দোকানে আবার বাহারি শাড়ি, গহনা। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এগুলোও প্রতিমা সাজানোর জন্য। পোশাক ঘর নামের একটি দোকান ভর্তি শাড়ি। চুমকি, কারচুপি, সুতার সুন্দর কাজ করা। দোকানের মালিক স্বপন জানালেন, শাড়িগুলো বিভিন্ন মাপের। প্রতিমার মাপ অনুযায়ী কেটে বিক্রি করা হয়। এসবের বাইরে এখানে সবধরনের পুজোর সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে। সেন ব্রাদার্স নামের একটি দেকানে ঢুকে দেখা গেল পুজোর সামগ্রী দিয়ে ঠাসা। সবই কাঁসা পিতলের। দোকানি বরুণ সেন জানালেন, পুজোর যত রকমের মাঙ্গলিক সামগ্রী প্রয়োজন হয় সবই তারা রেখেছেন। এদিকে একই গলিতে বেশ কয়েকটি পুজোর আয়োজন করা হবে। চলছে সে প্রস্তুতিও। উৎসবের কেনাকাটা। পুজোর প্রস্তুতি। সবমিলিয়ে জমজমাট শাঁখারি বাজার।
×