ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা ॥ আশ্রিত যখন বিষফোঁড়া

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা ॥ আশ্রিত যখন বিষফোঁড়া

আমরা ও একাত্তরে শরণার্থী হয়েছিলাম। মনে আছে, ডিসেম্বরে কলকাতায় বড় মামার দেয়া তখনকার পাঁচ রুপীতে কেনা বাজি পুড়িয়ে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয়ে বিজয় উদযাপন করেছিলাম। কারণ দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে বলে। শরণার্থীদের ভেতর কেবল তারাই ফিরতে চায় না যারা অপরাধী বা যাদের দেশের পরিবেশ রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে বৈরী। এটাও ঠিক বৈরী না হলে কেউ দেশত্যাগও করে না। কিন্তু মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারটা কি তাই? মিয়ানমারে তো সিরিয়া বা ইরাকের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে না। আফগানিস্তান বা লিবিয়ার মতো ও না যে বোমা ফাটছে যত্রতত্র। বরং আমরা চাই বা না চাই প্রতিবেশী এই দেশ ভালই এগিয়ে চলেছে। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আচরণ একান্তই তাদের ঘরোয়া বিষয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের সমস্যা বা মৃত্যুভয় চিরকালীন কিছু না। তারা সে দেশে যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এবং এটাও সত্য তাদের সবাই পালিয়ে আসতে পারেনি। যারা আসেনি বা আসতে পারেনি তারা কি সেদেশে বসবাস করছে না? তাহলে আগত শরণার্থীরা কেন ধরে নেবে যে তারা আর ফিরে যাবে না? কথাগুলো বললাম এই কারণে সম্প্রতি তারা না যাবার বাহানা তো করেছেই সঙ্গে মিছিলও করেছে। যে মিছিলে স্লোগান ছিল আঁরা ন যাইয়ুম। মানে আমরা যাব না। কথায় বলে আপনি আচরি ধর্ম পরকে শিখাবে। তাই গোড়াতে নিজেদের দোষগুলো দেখা দরকার। জানা দরকার কোথায় ভুল করেছি বা করছি আমরা। দুর্ভাগ্য ইচ্ছে থাকলেও সব কথা বলা বা লেখা যাবে না। তারপরও বলি সর্বোচ পর্যায়েও ছিল আস্কারা। দেশের বাঘা বাঘা নেতারা এমন সব কথা বলেছেন যাতে মনে হয় এদের ফিরিয়ে দেয়াটাই অপরাধ। সময় ও চিন্তার পার্থক্যে দুর্বল রাজনীতির নেতারা এমন কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। মানবিকতার নামে এখানে ধর্মীয় পরিচয় হয়ে উঠেছিল মুখ্য। এটা আমাদের সমাজের বড় রোগ। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি শ্রীলঙ্কার তামিল রিফিউজিরা যদি আমাদের দেশে আসতো আমরা এমন করতাম না। এত আবেগ কাজ করত না আমাদের। এই আবেগই এখন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেউ তাদের জোর করে বের করে দিতে বলছে না। তবে আগ বাড়িয়ে সরকারের মন্ত্রী তা বলে দিয়েছেন। এটাও ভয়ের ব্যাপার বৈকি। তাঁর বক্তব্য যেটুকু মিডিয়ায় এসেছে তাতে তিনি বলছেন আমরা জোর করে কাউকে পাঠাব না। একথা উঠবেই বা কেন? দু’দেশের সমঝোতা আর আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার ভেতর দিয়ে পথ তৈরি হলেই তো তারা ফিরে যাবে। আর সে পথ যখন খুলছে তখন এমন বক্তব্য প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কতটা সহায়ক? ঐ যে বললাম আমরাই ভেজাল। আমাদের ভেতরেই ভেজাল। রোহিঙ্গারা আর যাই হোক বোকা না। তারা বুঝে গেছে এক ধরনের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়েছে তারা। মাটি কাটা পাহাড় কাটা যৌন ব্যবসা থেকে মাদক সবকিছুই জায়েজ। যারা চট্টগ্রামের মানুষ তারা খুব ভাল জানেন এদের দৌরাত্ম্য কতটা। চট্টগ্রাম শহরে এখন মাদক ব্যবসার কাজে জড়িত কিশোর বা তরুণদের সিংহভাগই রোহিঙ্গা। লেখাপড়া না জানা সমাজ বঞ্চিত এসব বালক বা তরুণরা ভবিষ্যত কি জানে না। ফলে তারা টু পাইস কামাতে পারলেই হলো। জেনারেশনের পর জেনারেশন গেলেও এরা বদলাবে না। যার বড় উদাহরণ আমাদের দেশে থাকা বিহারীরা। এত বছর পরও আপনি কথা বলে দেখুন জানবেন তাদের মনোজগতে বাংলাদেশ নেই। আছে পেয়ারা পাকিস্তান। রোহিঙ্গাদের মনে মিয়ানমার না থাকলেও আমাদের দেশ নিয়ে ভাল কিছু নেই। থাকবেও না। সান অফ সয়েল বলে একটা কথা আছে। এটা ডটার অফ সয়েলও হতে পারে। মাটির টান না থাকলে মানুষের দেশাত্মবোধ থাকে না। থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ সে ধর্ম বা বর্ণের হোক না কেন দিনশেষে তারা সবাই বাংলাদেশী। তাদের জয় পরাজয় আনন্দ বেদনার অংশ তাদের স্বদেশ। তাই তারা উত্তেজনাপ্রবণ হলেও দাঙ্গা বাধায় না। কিন্তু দাঙ্গাপ্রবণ রাজনীতি তো আর থেমে নেই। সে রোহিঙ্গাদের দিয়েই তা করাবে। এখন আমরা যদি তা চাই তাহলে কথা নেই। আমরা যদি চাই আমাদের সমাজে রোহিঙ্গা নারীরা যৌনতা বা কামনার শিকার হোক ভিন্ন কথা। আমাদের তারুণ্যে তারা মাদক ছড়িয়ে দিক তাহলে বলার কিছু থাকে না। তবে এর ভবিষ্যত কিন্তু এখনই দৃশ্যমান। আমি খবরে দেখেছি তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের মানুষজনকে মারছে। কতটা সাহস আর বেপরোয়া হলে এমনটা করতে পারে। তাও আবার যেদেশের শরণার্থী সেদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া। এই দুঃসাহসের হোতা আমরা ও আমাদের মনোবিকার। ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে তাদের মনোভাব কতটা কঠোর আর নেগেটিভ সেটা মিছিলের মুখগুলো দেখলেই বোঝা সম্ভব। আমাদের দেশ জনবহুল দেশ। জনসংখ্যাকে সমস্যার বাইরে এনে সম্ভাবনা করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। মানুষের পা ফেলার জায়গা নেই। মাঠ নেই। খোলা ময়দান নেই। সবুজ নেই। দূষণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেখানে এই বোঝা বহনের কতটা সাধ্য আছে আমাদের দেশ জননীর? অথচ সরকারের তরফ থেকে খালি বলা হয় আমরা খেলে তারাও নাকি খাবে। দেশের মানুষের টাকায় এসব অনাহুত অতিথি কতদিন খাবে তার ওপর নির্ভর করে মানবতা। কথায় আছে তিনদিন পর অতিথি ও গন্ধ ছড়ায়। আর এরা বলছে কখনও যাবে না। এই ঔদ্ধত্য বন্ধ করা দরকার। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ। মেহমানদারী আমাদের জন্মগত স্বভাব। কিন্তু তার মানে এই না যেÑ কেউ ঘাড়ে চেপে বসলে আমরা তাদের কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। রাজনীতি সমাজনীতি এমনকি রাষ্ট্র ও এমন অযৌক্তিক আবদার মানতে পারে না। কারণ, এর পেছনে যুক্তি নেই। আছে উন্মাদনা। এই উন্মাদনা বা বেপরোয়া মনোভাব তাদের স্বদেশে পরদেশী করে রেখেছি। মিয়ানমারের অত্যাচার-অনাচার মানার পরও বলতে হবে রোহিঙ্গারা সামাজিক ও দেশজ কারণে উদ্ধত এক সম্প্রদায়। যাদের এখনই সাইজ করা না গেলে দেশের ভবিষ্যতে মন্দ প্রভাব পড়তে বাধ্য। রাজনীতি বা যেকোন কারণে এমন সমস্যা জিইয়ে রাখার নাম আত্মহনন। তাদের তাদের দেশেই ফিরতে হবে। রাষ্ট্র মানুষের জন্মগত অধিকার। তারা যদি অধিকার বোধ না বোঝে বা না মানে তার সহজ মানে এই, তারা কোন দেশকেই নিজের মনে করবে না। আর সে কারণটাই ভয়ঙ্কর। অভিবাসন বা দেশান্তরী হওয়া এক বিষয় আর দলে দলে এসে অনধিকার চর্চা করে নিজেদের মত বসবাসের বিষয়ে হুংকার করা ভিন্ন বিষয়। তাই এই যে হুংকার আরা ন যাইয়ুম। তার উত্তরে বলি: ওয়া যন পরিবো। ন গেলে কেনে যন পরে আঁরা ও জানি। তবু আশা করি, সমস্যার সমাধান হবে শান্তিপূর্র্ণ উপায়ে। তার আগে চোখের ঠুলি সরাতে হবে। অন্ধকার মন ধর্মের নাম ভাঙিয়ে যে সমবেদনা বা যে সহমর্মিতা তাকে সরিয়ে বাস্তবতার আলোকে দেখতে হবে সমস্যা। তবেই মুক্তি। বাংলাদেশ শান্তি চায়ল সেখানে এসব উটকো ঝামেলার জায়গা কোথায়? [email protected]
×