ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেস্টের আগে নাঈমের দুর্দান্ত রিহার্সেল

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৩১ আগস্ট ২০১৯

টেস্টের আগে নাঈমের দুর্দান্ত রিহার্সেল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃষ্টির কারণে শেষ পর্যন্ত সফরকারী শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং ক্রিকেট দল বেঁচেই গেল। এর আগে ও পরে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের অফস্পিনার নাঈম হাসানের ঘূর্ণি ঝড়ে বেসামাল হয়ে পড়েছিল সফরকারীরা। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বৃষ্টির আগে ৪ উইকেট নেয়া নাঈম বৃষ্টি শেষে নিয়েছেন আরও ৩ উইকেট। সবমিলিয়ে তার নেয়া ৭ উইকেটে লঙ্কান তরুণ দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৪ রানেই গুটিয়ে যায়। কিন্তু ১১৬ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ ইমার্জিং ক্রিকেট দল চতুর্থ ও শেষদিন দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১০২ রান তোলার পর ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন একমাত্র টেস্টের জন্য ঘোষিত দলে আছেন নাঈম। নিজ শহর চট্টগ্রামে ৫ সেপ্টেম্বর সেই ম্যাচে নামার আগে দারুণ রিহার্সেল সারলেন নাঈম। গত নবেম্বরে ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অভিষেক হয়েছিল মাত্র ১৭ বছর বয়সী অফস্পিনার নাঈমের। সেই সিরিজে তিনি ২ টেস্ট খেলে ৬ উইকেট শিকার করেন। এর মধ্যেই ইনিংসে একবার ৫ উইকেটও নেন। তবে পরের সিরিজে নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে জায়গা পেলেও খেলা হয়নি নাঈমের। কারণ নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন ছিল পেসারদের পক্ষে। দীর্ঘ ৯ মাস পর আবার দেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। নবীন সদস্য দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে একমাত্র টেস্ট শুরু হবে। আর নিজের শহরের সেই মাঠে আবার খেলতে নামার আগে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন বর্তমানে ১৮ বছর বয়সী এ তরুণ। দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে না থাকায় নির্বাচকরা তাকে একটু পরখ করে নিতে চেয়েছিলেন সফরকারী শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে ৪ দিনের ম্যাচে। সেই পরীক্ষাটা নাঈম খুব ভালভাবেই দিয়েছেন। নির্বাচকরা তাকে জাতীয় দলের ভাবনায় রেখেছিলেন বলেই এবার প্রাথমিক দলে রাখা হয় তাকে। খুলনায় তার ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়ে যায় সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশ ইমার্জিং প্রথম ইনিংসে ৩৬০ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছিল। এরপর শ্রীলঙ্কার তরুণরা ব্যাট করতে নেমেই নাঈমের ঘূর্ণি তোপের মুখে পড়ে যায়। দ্বিতীয়দিন শেষে ৪ উইকেটে ১০১ রান করা লঙ্কানদের সবগুলো উইকেট নাঈম একা তুলে নেন। এরপর তৃতীয়দিন বৃষ্টির কারণে অর্ধেক সময়ই খেলা হয়নি। এর মধ্যে ৬ উইকেটে ১৯০ রান তুলে ফেলে লঙ্কানরা। আশেন বান্দারা সবচেয়ে বেশি বিরক্তির উদ্রেক করেছিলেন একক সংগ্রামে। তিনি ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। শুক্রবার চতুর্থ ও শেষদিনে একপ্রান্ত একাই আগলে রেখে দলের রান বাড়িয়েছেন বান্দারা। অপরদিকে ধ্বংস চালিয়ে গেছেন নাঈম। তার ঘূর্ণি ছোবলে আরও ৩ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। আর বান্দারা ৩৭৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ২৫৬ বলে ৮ চারে ৮৫ রান করার পর পেসার শফিকুল ইসলামের শিকার হলে ২৪৪ রানে শেষ হয় শ্রীলঙ্কা ইমার্জিংয়ের প্রথম ইনিংস। নাঈম একাই ৪০ ওভার বোলিং করে টেস্ট খেলতে নামার আগে অনুশীলনটা ভালই সেরেছেন। ১৪টি মেডেনসহ ৯৩ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল খেলতে নামে ১১৬ রানে এগিয়ে থেকে। তবে মাত্র ৬৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ রান করেন। এরপর ওপেনার সাইফ হাসান ও জাকির হাসান দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। সাইফ ১১৩ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪০ আর জাকির ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে অফস্পিনার নিশান পেইরিস একাই ৩ উইকেট তুলে নেন। ৪ উইকেটে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ১০২ রান তোলার পর উভয় দল ড্র মেনে নেয়। ইমার্জিং দলের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে ছিলেন নির্বাচকরা। এই ম্যাচে ভাল পারফর্মারদের টেস্ট দলে সুযোগ করে দেয়ার জন্য নজর রেখেছিলেন তারা। সেদিক থেকে নজরে ছিলেন শান্ত, সাইফ আর নাঈম তো আগেই পরীক্ষিত। তাছাড়া ম্যাচের দ্বিতীয়দিনেই ৪ উইকেট নিয়ে তিনি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য স্পিননির্ভর স্কোয়াড গড়বে বাংলাদেশ এটাই স্বাভাবিক। সর্বশেষবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ দল তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম আর সাকিব আল হাসানই জয় এনে দিয়েছিলেন। আফগান বধের জন্যও তাই সেই স্পিনারদের নিয়েই দল গড়া হয়েছে শেষ পর্যন্ত। নাঈম টিকে গেছেন টেস্ট স্কোয়াডে। যদি স্পিনের ওপরই নির্ভর করে একাদশ গড়ে বাংলাদেশ, সেক্ষেত্রে নাঈমের খেলা প্রায় নিশ্চিতই বলা যায়।
×